ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

কে আমাকে বাবা বলে ডাকবে?  ১০৩ স্বজন হারানো ফিলিস্তিনি

প্রকাশিত: ১২:০৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

কে আমাকে বাবা বলে ডাকবে?  ১০৩ স্বজন হারানো ফিলিস্তিনি

গুফেরি

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলায় নিজে বেঁচে গেলেও স্ত্রী-সন্তানসহ ১০৩ জন আত্মীয়কে হারিয়েছেন আহমাদ আল-গুফেরি। বোমা হামলায় যখন গুফেরির পরিবারের সবাই নিহত হয়, তখন বাড়ি থেকে ৫০ মাইল দূরে পশ্চিম তীরে আটকা পড়েছিলেন তিনি।

৭ অক্টোবর ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের সময় তেল আবিবে একটি আবাসন নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করছিলেন গুফেরি। যুদ্ধ শুরুর কারণে তিনি আর নিজের পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরতে পারেননি। তিনি স্ত্রী শিরিনের সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেছিলেন ৮ ডিসেম্বর।

গুফেরি বলেন, ‘সে জানত যে সে হয়তো মারা যাবে।’ সে আমাকে বলেছিলো, ‘তাকে মাফ করে দিতে। সংসার জীবনে আমার সঙ্গে খারাপ কিছু করে থাকলে তার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলো সে।’ আমি তাকে বলেছিলাম, ‘এসব বলার দরকার নেই। এটাই ছিল আমাদের শেষ কথোপকথন।’ 

ওই দিন সন্ধ্যায়ই মামার বাড়িতে বোমা হামলায় গুফেরির স্ত্রী এবং তার তিন কন্যা - তালা, লানা এবং নাজলা নিহত হয়।

সেই সঙ্গে বোমা হামলায় নিহত হয় গুফেরির মা, তার চার ভাই এবং তাদের পরিবার, কয়েক ডজন খালা, চাচা এবং চাচাত ভাই। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা শতাধিক। দুই মাস পার হলেও এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে তাদের মরদেহ আটকে রয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে তার ছোট মেয়ের দুই বছর হওয়ার কথা ছিল। তার জন্মদিন পালন করার কথা অথচ আজ তার মরদেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা হচ্ছে।’ এসময় মেয়ের মরদেহ হাতে ধরে রাখতে পারছিলেন না গুফেরি, কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।  

গুফেরি বলেন, ‘আমার মেয়েরা আমার কাছে ছোট্ট পাখির মতো। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, আমাদের কী হয়েছে। আমি মনে হয় ঘোরের মধ্যে আছি।’ 

তিনি বলেন, আত্মীয়-স্বজনদের কাছে জানতে পারি, শহরের প্রথম বোমা হামলা আমার পরিবারের ওপরই হয়েছে। কারণ, আমার বাড়িটি ছিল শহরের প্রবেশ পথে।

‘১০ মিনিট পর পর আমাদের চারটি বাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়। আমাদের পুরো পরিবার বোমার আগুনে ঝলসে গেছে। আমাদের বাড়িঘর এমনভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে যেন একটা সবুজ প্লাস্টিকের মগ আগুনে দুমড়ে মুচড়ে গেছে। পুরো জায়গাটাই এখন পুরোপুরি ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। এখন সেখানে ধূলার আস্তরণ ছাড়া আর কিছু্ই নেই’, বলেন গুফেরি  

গুফেরি বলেন, ‘ইসরায়েলি হামলায় আমাদের পরিবারের নিহত সবচেয়ে বয়স্ক সদস্য ছিল আমার দাদী। তার বয়স ছিল ৯৮। আর সবচেয়ে কমবয়সী সদস্য ছিল সদ্যজাত শিশু।’    

পরিবারের সদস্যদের নিহতের খবরে গুফেরি এতোটা ভেঙে পড়েছেন যে, তিনি আর নিজের শহরে ফিরে যাননি। অবশ্য তিনি এখনও মাঝে মাঝে গাজায় তার বেঁচে থাকা আত্মীয়দের ফোন করেন।

গুফেরি বলেন, ‘গাজায় আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। আমি কার জন্য ফিরে যাব? কে আমাকে বাবা বলে ডাকবে? কে আমাকে প্রিয়তম বলে ডাকবে? আমার স্ত্রী আমাকে বলতেন আমি তার জীবন ছিলাম। এখন আমাকে কে বলবে?’

তাসমিম

×