অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট।
ধনী বিনিয়োগকারীদের জন্য ঘোষিত গোল্ডেন ভিসা প্রকল্প বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া। এই প্রকল্পের আওতায় বিনিয়োগকারীদের অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের অধিকার দেওয়া হতো।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নিল বলেছেন, ‘এটি কয়েক বছর ধরেই স্পষ্ট যে এই ভিসা আমাদের দেশ এবং অর্থনীতির প্রয়োজন অনুসারে ফল দিতে পারছে না।’
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রকল্পটি সাজানো হলেও অস্ট্রেলিয়া সরকার দেখেছে, এখান থেকে তারা আর্থিকভাবে প্রত্যাশিত লাভ করতে পারছে না। এরপর অভিবাসন প্রক্রিয়া ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে বাতিল করা হয়েছে গোল্ডেন ভিসা প্রকল্প।
গোল্ডেন ভিসার তহবিল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন—দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পটির সমালোচকেরা বলে আসছেন। এবার প্রকল্পটি বাতিল করে আরও দক্ষ কর্মীদের ভিসা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এই প্রকল্পের আওতায় ২০১২ সাল থেকে হাজার হাজার গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারীর ভিসা (এসআইভি) দেওয়া হয়েছে। সরকারি তথ্যমতে, তাঁদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ সফল আবেদনকারী এসেছেন চীন থেকে।
বিদেশি বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবন বাড়ানোর উপায় হিসেবে এসব ভিসা দেওয়া হয়েছিল। এই ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে প্রার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় ৫০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা ৩৩ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করতে হয়েছে।
একাধিক পর্যালোচনার পর অস্ট্রেলিয়া সরকার দেখেছে, প্রকল্পটি তার মূল উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ। গত ডিসেম্বরে গৃহীত এক নীতিতে সরকার ঘোষণা করে, অস্ট্রেলিয়ায় অতিরিক্ত অবদান রাখতে সক্ষম দক্ষ অভিবাসীদের জন্য আরও বেশি ভিসা তৈরি করা হবে এবং বাতিল হবে গোল্ডেন ভিসা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী ক্ল্যান্সি মুর অস্ট্রেলীয় সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং আমলারা অস্ট্রেলিয়ায় তাদের অবৈধ তহবিল গঠন এবং আয় লুকাতে গোল্ডেন ভিসাকে ব্যবহার করেছেন।
এরই মধ্যে কিছু দুর্বল দিকের জন্য কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় এসেছে প্রকল্পটি। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া সরকারের এক তদন্তের পর প্রকল্পটির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, এর মাধ্যমে মানি লন্ডারিংসহ অন্যান্য জালিয়াতির আশঙ্কা রয়েছে। ২০২২ সালে অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, যাঁরা এই প্রকল্প ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ করছিলেন, তাঁদের মধ্যে কম্বোডিয়ার হুন সেন প্রশাসনের সদস্যরাও রয়েছেন।
সরকারি তদন্তে আরও দেখা গেছে, ভিসাগুলোর আওতায় কম ব্যবসায়িক দক্ষতাসম্পন্ন মানুষেরা অস্ট্রেলিয়ায় আসছেন। তাঁদের ওপর করছাড় থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার জনগণ।
সূত্র: বিবিসি।
এম হাসান