ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

রাম মন্দির উদ্বোধন করলেন মোদি

প্রকাশিত: ১৭:৩০, ২২ জানুয়ারি ২০২৪

রাম মন্দির উদ্বোধন করলেন মোদি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মন্দির

ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও তার পিতৃসংস্থা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের গত অর্ধশতাব্দীর প্রকল্প অযোধ্যা রাম মন্দিরের উদ্বোধনপর্ব শেষ হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মন্দিরের উদ্বোধন করেছেন।

ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, উদ্বোধন উপলক্ষে সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শুরু হয়। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন নরেন্দ্র মোদি। আচার অনুষ্ঠান ও উদ্বোধন শেষে দুপুর সোয়া ১ টার দিকে মন্দির থেকে বেরিয়ে আসেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা’। মন্দিরের ভেতর হিন্দুদের অত্যন্ত জনপ্রিয় দেবতা শ্রী রামের যে শিশুমূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, সেটিরই নাম ‘রামলালা’। হিন্দি ভাষায় ছেলেশিশুদের আদর করে ‘লালা’ বলে সম্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে গত ১১ দিন উপবাস করেছেন মোদি। সোমবার সকাল ১০টার দিকে হেলিকপ্টারে অযোধ্যা পৌঁছান তিনি।

তারপর মন্দিরে গিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।  এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আবন্দীবেন প্যাটেল এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএএস) প্রধান মোহন ভাগবত।  

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, অযোধ্যা শহরের  ৭০ একরের একটি কমপ্লেক্সের ৭ দশমিক ২ একর জায়গাজুড়ে তিন তলা মন্দিরটি বানানো হয়েছে। নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে গোলাপি চুনাপাথর ও কালো গ্রানাইট পাথর। আর এতে ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি ৭০ লাখ রুপি।

মন্দিরের ভেতর ‘রামলালা’র যে মূর্তি বা বিগ্রটি স্থাপন করা হয়েছে সেটি কালো কষ্টি তৈরি, দৈর্ঘ ৪ ফুট ২৫ ইঞ্চি। গত সপ্তাহে এই মূর্তিটি মন্দিরে আনা হয়েছে।

সোমবার মন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজনীতি, অর্থনীতি, ক্রীড়া, বিনোদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ও সেলিব্রেটিসহ প্রায় ৮ হাজার মানুষকে জানিয়েছিল বিজেপি। আমন্ত্রিত অতিধিদের মধ্যে ভারতের বিরোধী দলগুলোর জোট ইনডিয়া এবং মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের নেতারাও ছিলেন।

এই অতিথিদের অধিকাংশই অযোধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে ফুল ও অন্যান্য উপহারও আনেন অনেকে। তবে বিরোধী জোট ইনডিয়ার নেতাদের দেখা যায়নি।

প্রসঙ্গত, ভারতের বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ছোট শহর অযোধ্যায়  শ্রীরাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের, যিনি এই ধর্মের একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় দেবতা। ‘রামের জন্মভূমি’ বলে পরিচিত অযোধ্যায় অতীতে বিশাল একটি রামমন্দির ছিল বলেও তথ্য পাওয়া যায় বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্রে।

ভারতের মোগল সাম্রাজ্যের স্থপতি সম্রাট জহিরউদ্দিন মুহম্মদ বাবরের নির্দেশে তার সেনাপতি মীর বাকি সেই মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, যা পরিচিতি পায় ‘বাবরি মসজিদ’ নামে। মোগল আমলের শেষ  উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল শুরু হওয়ার পর ১৯৮৫ সালে প্রথম মসজিদ ভবনের বাইরে দেবতা শ্রীরামের শৈশবকালীন মূর্তি ‘রামলালা’ স্থাপনের অনুমতি চেয়েছিলেন জনৈক হিন্দু সাধু মোহন্ত রঘুবীর দাস, কিন্তু তার সেই আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছিল।

তারপর প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় এই নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিতর্ক চলার পর ১৯৯২ সালে বিজেপির অভিভাবক সংস্থা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) নেতৃত্বে একদল উগ্র করসেবক (আরএসএসের কর্মীবাহিনী) বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে। এ ঘটনার জেরে ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয় ভারতে এবং সেই দাঙ্গায় নিহত হয়েছিলেন অন্তত ২ হাজার মানুষ। 

বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির স্থাপন হবে কি না— এ সংক্রান্ত একাধিক মামলা বছরের পর বছর ধরে চলেছে এলাহাবাদ (বর্তমানে প্রয়াগরাজ) হাইকোর্ট এবং পরে সুপ্রিম কোর্টে। ২০২০ সালে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করে যাবতীয় মামলার নিষ্পত্তি ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্ট।

মন্দিরের পুরো নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। নরেন্দ্র মোদি শুধু মন্দিরের নিচ তলাটি উদ্বোধন করেছেন। বাকি অংশের নির্মাণ কাজ চলতি বছরের শেষ নাগাদ সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উদ্বোধন উপলক্ষে আগত অতিথিদের জন্য ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে মন্দির চত্বরে। সোমবার কেবল এই অতিথিরা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য মন্দিরটি খুলে দেওয়া হবে মঙ্গলবার থেকে। সকালে ও বিকালে নির্ধারিত সময়ে মন্দিরে আসতে পারবেন তারা।

 

এস

সম্পর্কিত বিষয়:

×