ভারত ও মালদ্বীপের পতাকা
মালদ্বীপকে ‘শিক্ষা’ দিতে এবার ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পের ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। নিদান এসেছে ভারত মহাসাগরের এই অনিন্দ্যসুন্দর দ্বীপমালায় হিন্দি সিনেমার শুটিং না করার। মুম্বাইয়ের ‘অল ইন্ডিয়া সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (এআইসিডব্লিউএ) বলেছে, সিনেমার শুটিং করতে কিংবা নিছক ছুটি কাটাতে কেউ যেন আর মালদ্বীপে না যান।
সংগঠনের সভাপতি সুরেশ শ্যামলাল রবিবার এক ভিডিও বার্তায় ওই অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, দেশে ওই রকম বহু দ্বীপ রয়েছে। সেদিকে তাকান। মালদ্বীপে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
সুরেশ শ্যামলালের বিবৃতি জারি হয় গতকাল মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে ভারত–মালদ্বীপের উচ্চপর্যায়ের কোর গ্রুপের বৈঠকের পর। ওই বৈঠকেই মালদ্বীপের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে সে দেশে থাকা ৮৮ ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যকে ভারতে ফিরিয়ে নিতে হবে।
ওই বৈঠকের পর মালদ্বীপের পক্ষ থেকে সেনা অপসারণের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হলেও বৈঠক নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রচার করেছে, তাতে তার উল্লেখই করা হয়নি।
বিবৃতিতে ভারত বলেছে, মালদ্বীপের মানুষের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে ভারতীয় বিমানগুলোর কাজ যাতে অব্যাহত থাকে, সে জন্য দুই দেশ গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। দুই দেশের পরবর্তী বৈঠকের দিন পারস্পরিক সুবিধামতো ঠিক করা হবে।
শুটিংয়ের জন্য মালদ্বীপে না যেতে সুরেশ শ্যামলালের নিদানের কারণ যে সেনা প্রত্যাহারে সে দেশের চাপ, সেটি তাঁর বিবৃতিতেই স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, ‘১৫ মার্চের মধ্যে ভারতকে সেনা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলেছে মালদ্বীপ। কয়েক দিন আগে সে দেশের কয়েক মন্ত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ‘কটূক্তি’ করেছিলেন।’
লাক্ষা দ্বীপে নরেন্দ্র মোদির সফর এবং সেখানে দেশের মানুষকে লাক্ষা দ্বীপ ভ্রমণ করতে তিনি আহ্বান জানানোর পর মালদ্বীপের তিন মন্ত্রী তাঁকে নিয়ে মন্তব্য করেন। এর পর থেকে মালদ্বীপকে বর্জন করার একটা ঝোঁক ভারতে শুরু হয়েছে।
সুরেশ শ্যামলাল বলেন, ‘সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দেশের বলিউড, টালিউড, কলিউডসহ ভারতের সব জায়গার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ও অভিনেতা–অভিনেত্রীদের সবার কাছে আমার আবেদন, কেউ যেন ওই দেশে সিনেমার শুটিং করতে বা ছুটি কাটাতে না যান। সামাজিক মাধ্যমেও মালদ্বীপসংক্রান্ত কিছু রাখবেন না। আমাদের দেশে অনেক দ্বীপ রয়েছে। দয়া করে সেগুলোকে তুলে ধরুন।’
এই অনুরোধের পরই শ্যামলালের হুমকি, ‘দেশের বিরুদ্ধে যাঁরা যাবেন, আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে যাব। আমরা অনেক কিছুই সহ্য করতে পারি। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে কিছু সহ্য করব না। এই সন্ধিক্ষণে আমাদের সবাইকে দেশ ও প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকতে হবে।’
মালদ্বীপের অর্থনীতি প্রধানত পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। কোভিড–১৯ অতিমারির সময় পর্যটকের সংখ্যা মারাত্মক হ্রাস পাওয়ায় সে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ার মুখে দাঁড়িয়েছিল। পর্যটনের পরই রয়েছে মাছ রপ্তানি ও জাহাজ তৈরির ব্যবসা। চীনপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু নির্বাচিত হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটেছে।
মুইজ্জুর নির্বাচনী স্লোগান ছিল ‘আউট ইন্ডিয়া’। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে তাঁরা সে দেশে অবস্থিত ৮৮ ভারতীয় ফৌজকে ফেরত চলে যেতে বলেছেন। সে দেশের আগের সরকারের নীতি ছিল ভারতপন্থী। তাদের সঙ্গে চুক্তির কারণেই ওই সেনারা সে দেশে রয়েছেন। মালদ্বীপকে দেওয়া ভারতীয় ছোট বিমান ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধারকাজ ও পণ্য সরবরাহে সাহায্য করা তাঁদের কাজ।
ভারতের বিরোধিতা মুইজ্জু যত করছেন, ততই তিনি নিজেকে চীনের দিকে টেনে নিচ্ছেন। সম্প্রতি পাঁচ দিনের চীন সফরকালে সে দেশের প্রেসিডেন্টকে তিনি সে দেশ থেকে আরও বেশি করে পর্যটক পাঠাতে অনুরোধ করেছিলেন। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংও তাঁকে জানিয়েছেন, মালদ্বীপের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাঁরা তাঁদের পাশে থাকবেন।
স্পষ্টতই ভারতের ‘উগ্র জাতীয়তাবাদী’ মহল শক্তিহীন মালদ্বীপকে ‘ভাতে মারার’ নীতি নিয়েছে। ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান সংঘর্ষের পর বিস্তীর্ণ ভারতীয় ভূখণ্ড চীন দখল করে নেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ চীনের প্রতিও এই নীতি গ্রহণ করতে চেয়েছিল। সে সময় ‘চীন বর্জন’ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল।
তবে চীনের হুমকিতে তা কার্যকর করা যায়নি। বরং ভারতীয় অর্থনীতির অতিমাত্রায় চীননির্ভরতা বেড়েই চলেছে। এখন দেখার বিষয় ‘মালদ্বীপ বর্জন’ কত দূর এগোয়।
এস