ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিয়ে করলেই মালয়েশিয়া থেকে বিতাড়িত হবে প্রবাসীরা

প্রকাশিত: ১৮:৩৪, ৪ নভেম্বর ২০২৩

বিয়ে করলেই মালয়েশিয়া থেকে বিতাড়িত হবে প্রবাসীরা

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ান মেয়েদের বিয়ে করলে প্রবাসী শ্রমিকদের বিতাড়িত করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক রুসলিন জুসোহ।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (৩ নভেম্বর) দেশটির বেরিতা হারিয়ানে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।

রুসলিন জুসোহ বলেন, মালয়েশিয়ায় পিএলকেএসধারী (অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট) বিদেশি কর্মীদের স্থানীয় নাগরিকদের (মেয়েদের) বিয়ে করা ইমিগ্রেশন আইনে নিষিদ্ধ। এই আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হলে তাদের ওয়ার্ক পারমিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে এবং ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট ১৯৫৬/৬৩ (অ্যাক্ট ১৫৫) অনুযায়ী দেশ থেকে বিতাড়ন করা হবে।

তিনি বলেন, শ্রমিক ভিসায় আসা বিদেশিদের বিয়ে করলে স্থানীয় নারীদের পরিত্যক্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। দেখা গেছে বিদেশি শ্রমিকরা বিয়ে করে এবং একসময়ে মালয়েশিয়ায় স্ত্রী-সন্তানদের রেখে নিজ দেশে ফিরে যান। তখন এই স্ত্রী-সন্তান পরিত্যক্ত হয়ে যান। এনজিও’র তথ্যমতে, এ কারণে মালয়েশিয়ায় সিঙ্গেল মাদারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। এ কারণে বিদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ার স্থানীয় নারীদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ।

পিএলকেস হলো মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে কাজ করতে আসা বিদেশি শ্রমিকদের একটি ওয়ার্ক পারমিট যা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এবং এক থেকে ১০ বছরের জন্য সাতটি সেক্টরে এটি দেওয়া হয়।

মুসলিম দম্পতির বিবাহ বৈধ হবে যদি বিবাহের আইনি প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করে এবং বিবাহবিচ্ছেদ শুধুমাত্র তখনই ঘটতে পারে যদি তালাকের আবেদনটি শরিয়া আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়।

ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক বলেন, তার ডিপার্টমেন্ট স্থানীয় এবং বিদেশিদের বিশেষ করে পিএলকেএসধারীদের বিয়ের বিষয়ে রাজ্যের ধর্মবিষয়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলেচনা করবে।

তিনি বলেন, অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এবং বিদেশি বিশেষ করে পিএলকেএস হোল্ডারদের বিয়ে সংক্রান্ত ইমিগ্রেশনের কঠোর শর্ত ও বিধিবিধান মেনে চলতে উপেক্ষা করা হয়। এ বিষয়ে বিদেশি এবং স্থানীয়দের বিয়ের জন্য নির্দেশিকা এবং স্পষ্ট স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা। মূলত, রাষ্ট্রের ধর্মবিষয়ক এবং অভিবাসন কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারের অধীনে বিয়ে সংক্রান্ত নির্ধারিত আইন লঙ্ঘন করলে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা নিতে পারে।

পরিচালক বলেন, স্থানীয় দম্পতি এবং পিএলকেস হোল্ডারদের বিয়ের বিষয়ে অভিবাসন আইন অনুযায়ী অবিলম্বে প্রদত্ত পারমিট বাতিল করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওা হতে পারে।

সম্প্রতি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বেরিতা হারিয়ানে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি পুরুষরা বিশেষ করে পাকিস্তানিরা মালয়েশিয়ায় থাকার জন্য এবং ব্যবসা করার জন্য আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় নারীদের বিয়ে করেন। পাকিস্তানিরা অধিকাংশ বয়স্ক মালয়েশিয়ান নারীদের বিয়ে করেন। পাকিস্তানিদের এমন একটি ঘটনার প্রমাণও মিলেছে।

গত বছর, কেলান্টান ইমিগ্রেশন ডিরেক্টর আজহার আব্দুল হামিদকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশিদের ১৫টি আবেদন বাতিল করা হয়েছিল, কারণ বিদেশিরা তাদের মালয়েশিয়ান স্ত্রীদের নাম ব্যবহার করেছিলেন কেবল ব্যবসা করার জন্য।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেরিতা হারিয়ানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় নারীদের বিয়ে করা পাকিস্তানি পুরুষদের কৌশলগুলোর মধ্যে একটি হলো ব্যবসা পরিচালনার জন্য শহর এবং বস্তির উপকণ্ঠে অবস্থান যেখানে কর্তৃপক্ষ খুব কমই নজরদারি করে। আরেকটি কৌশল হলো তারা স্থানীয় নাগরিকের নাম ব্যবহার করে বা ব্যবসার লাইসেন্সে নাম পরিবর্তন না করে নির্দিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করে স্থানীয় বাসিন্দার ব্যবসা দখল করে নেন।

২০১৭ সালের মে মাসে বেরিতা হারিয়ান ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, সেলাঙ্গর এবং পাহাং রাজ্যের ইসলামিক ধর্ম বিভাগ অভিবাসন আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলে বিদেশি কর্মীরা সহজেই স্থানীয়দের বিয়ে করতে পেরেছেন।

প্রকৃতপক্ষে, যেসব স্থানীয় নারী অভিবাসন আইনে নির্ধারিত বিয়ের শর্ত এবং পদ্ধতি মেনে বিদেশি কর্মীদের বিয়ে করেন না তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অভিবাসীদের (পাটি) আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে বিচার করা যেতে পারে।

পিএলকেএসধারী স্থানীয় নারীকে বিয়ে করলেই অবৈধ হয়ে যান এবং স্বামীর দাবি নিয়ে এই অবৈধ অভিবাসীর তথ্য গোপন করা বা রক্ষা করার কাজটি আইন ১৫৫ (সংশোধনী ২০০২) এর ধারা ৫৫ই(১) লঙ্ঘন করে যা অপরাধ এবং এ কারণে দোষী সাব্যস্ত হলে ১০ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত জরিমানা বা সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ছয়টি বেত্রাঘাত দণ্ড হতে পারে।

রুসলিন বলেন, বিদেশি যারা স্থানীয় নাগরিকদের বিয়ে করতে চান তাদের নিয়োগকর্তার তথ্যসহ একটি বিশেষ ফরম পূরণ করতে হবে। এই পদ্ধতিতে শনাক্ত করা যেতে পারে যে বিদেশিকে বিয়ে করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে কি না।

তিনি বলেন, যেসব ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ বিদেশিকে বিয়ে করার আবেদনের প্রাথমিক তথ্য পান তাদের উচিত সে তথ্য অভিবাসনকে জানিয়ে দেওয়া, যেন আইন ভঙ্গ করছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়। বৈধভাবে মালয়েশিযায় বিদেশি শ্রমিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় শুধু ভিসায় উল্লেখিত নির্ধারিত সেক্টরে কাজ করার জন্য, বিয়ে করার জন্য নয়।

 

এবি

সম্পর্কিত বিষয়:

×