ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

১০৩৭ জনের মৃত্যু, রক্তের জন্য হাহাকার

২০ সেকেন্ডের ভূমিকম্পে লণ্ড ভণ্ড মরক্কো

প্রকাশিত: ১৫:২৫, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩; আপডেট: ২৩:২৫, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

২০ সেকেন্ডের ভূমিকম্পে লণ্ড ভণ্ড মরক্কো

মরক্কোয় ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের বের করে আনার চেষ্টা করছে উদ্ধারকর্মীরা

ছয় দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কাঁপল মরক্কো। শুক্রবার মধ্যরাতে দেশটিতে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির স্থায়িত্ব ছিল ২০ সেকেন্ড। এ ঘটনায় সর্বশেষ ১০৩৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। শ’ শ’ লোক নিখোঁজ রয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, মৃত্যু দুই হাজার ছাড়াতে পারে। ভূমিকম্পের ঘটনায় মরক্কোর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ বিশ্বনেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেছেন। মরক্কোর হাসপাতালগুলোতে রক্তের জন্য হাহাকার পড়ে গেছে। আহতদের বাঁচাতে রক্তের আবেদন করেছে হাসপাতালগুলো। খবর এএফপি, বিবিসি ও আলজাজিরা অনলাইনের।    
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার জানায়, নিহতের সংখ্যা ১০৩৭। স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মৃত্যু পাহাড়ি এলাকায় হয়েছে; যেখানে পৌঁছানো কঠিন ছিল। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ ইউএসজিএস বলেছে, দেশটির স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ১১টার কিছুক্ষণ পরে আটলাস পর্বতে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর গভীরতা ছিল ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এর কেন্দ্রস্থল মারাক্কেশের প্রায় ৭২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। 
দেশটির সশস্ত্র বাহিনী সতর্ক করে বলেছে, ভূমিকম্পের পরে আরও ছোটখাটো ভূকম্পন হতে পারে। ফলে বাসিন্দারা এখনো ঝুঁকির মধ্যে আছে। সামাজিক মাধ্যম এক্সে বাসিন্দাদের নিরাপদে অবস্থান নেওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। ভূমিকম্পটি মরক্কোর প্রাচীন শহর ও পর্যটনকেন্দ্র মারাক্কেশে আঘাত হানে। অভিজাত ও পরিপাটি শহরটি এখন ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। ভূমিকম্পের প্রভাবে দেশটির রাজধানী রাবাত ও কাসাব্লাঙ্কাসহ অন্যান্য শহরও কেঁপে ওঠে। মারাক্কেশের ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার শহরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ক্যাম্প খুলে স্থানীয়দের রক্ত দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রচুর রক্ত প্রয়োজন।

তাই স্থানীয় রক্তদানে সক্ষম ব্যক্তিদের রক্ত দিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার। 
মারাক্কেশের পঞ্চম মোহাম্মদ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প খোলা হয়েছে। রক্ত গ্রহণের পাশাপাশি এসব ক্যাম্পে আহতদের সেবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মারাক্কেশে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আহতদের সেবার জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন পড়েছে প্রচুর রক্তের। তবে রক্তের জোগানদাতার অভাবে হাহাকার পড়ে গেছে। স্থানীয় ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার স্থানীয়দের রক্ত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থাপনার অন্তর্ভুক্ত মারাক্কেশের ভবনগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরটির প্রাণকেন্দ্র জেমা আল-ফনা স্কয়ারের একটি মসজিদের মিনার ধসে গেছে।

দেশটির উদ্ধারকারী কর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিতদের উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছেন। শহরটির বাসিন্দা মিলোদ স্ক্রউত বলেছেন, সবকিছুই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। তবে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ভূমিকম্পে আহতদের শতাধিক স্বজন স্থানীয় একটি হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করছেন। মারাক্কেশের হাসপাতালে ভর্তি আহতদের বেশিরভাগই শহরের বাইরের পার্বত্য অঞ্চল থেকে এসেছেন। স্থানীয় হাসপাতালে গুরুতর আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা না থাকায় তাদের সেখানে নেওয়া হয়েছে। শহরটির বাসিন্দা জাওহারি মোহাম্মদ লোকজন ভূমিকম্পের সময় নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য কীভাবে মরিয়া হলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, সেই দৃশ্য বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের কারণে আমি এখনো বাড়িতে ঘুমাতে পারি নাই। পুরনো শহরটির বাড়িঘরগুলো অনেক পুরনো। তিনি বলেন, এখানে যদি একটি ঘর পড়ে যায়, তা হলে সেটির কারণে আরেকটিও পড়ে যাবে।
মরক্কোর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তারৌদন্তের কাছের একটি এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক হামিদ আফকার। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের সময় তিনি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। কয়েক বার আফটারশকও অনুভূত হয়েছে। হামিদ বলেন, প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে ভূমিকম্পটি স্থায়ী ছিল। আমি দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দরজা নিজেই খুলে গেল এবং বন্ধ হয়ে গেল।

এসআর

×