সুইটি ও শেরু
অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে এবং ঊনবিংশ শতকের গোড়ায় বাঙালি বাবু সংস্কৃতিতে পোষ্যদের বিয়ে দেওয়ার ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। বিভিন্ন বাংলা সাহিত্যে পোষ্য বিড়ালের বিয়ের অনুষ্ঠানের বিবরণ রয়েছে।
বাবু সংস্কৃতি লোপ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শখে বিড়ালের বিয়ে দেওয়ার চলও গায়েব। কিন্তু ভারতের নানা প্রান্তে এখনও পোষ্যদের বিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা সামনে এসেছে।
বাড়িতে বিয়ের সানাই বাজছে। চারদিকে সাজ সাজ রব। নিজের ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন গুরুগ্রামের দুই দম্পতি। কিন্তু এই বিয়ে সাধারণ হয়েও যেন অসাধারণ। বিয়েতে বর-কনের পিঁড়িতে বসে রয়েছে দুটি কুকুর। এক হয়ে যাচ্ছে তাদের চার পা।
সমস্ত সামাজিক রীতিনীতি মেনেই আয়োজন করা হয়েছিল বিয়ের অনুষ্ঠান। গত রবিবার গুরুগ্রামের পালাম বিহার এলাকার জৈল সিংহ কলোনিতে এই ঘটনা ঘটে।
কনের নাম সুইটি। সবিতা ওরফে রানি দত্তক নিয়েছিলেন সুইটিকে। তার স্বামী রাজা এক জন চা বিক্রেতা। এক সাক্ষাৎকারে রাজা জানিয়েছেন, তিনি ও তার স্ত্রী রানি তিন বছর আগে সুইটিকে দত্তক নিয়েছিলেন।
রাজা নিয়মিত মন্দিরে গিয়ে রাস্তার পশুপাখিদের খাবার খাওয়াতেন। একদিন, সুইটি তাকে অনুসরণ করে বাড়ি চলে আসে। তার পরেই তাকে বাড়িতে রেখে দেন রাজা ও রানি।
রাজা জানান, তার প্রতিবেশী রামসেবক নামের এক ব্যক্তির একটি পোষা কুকুর রয়েছে। নাম শেরু। সম্প্রতি তিনি ঠাট্টা করে বলেন, তাদের কুকুর দু’টির বিয়ে দিলে কেমন হয়?
সুইটির কথা জিজ্ঞাসা করলে রানি জানান, তার কোনো সন্তান নেই। সুইটিকেই নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন তিনি। রানি বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে আরও অনেক পোষ্য রয়েছে। আমি এবং আমার স্বামী দু’জন মিলে তাদের যত্ন নেই। সুইটির বিয়ে নিয়ে পাড়ার অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমরাও সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে চার দিনের মাথায় পাত্র খুঁজে বিয়ে দিই। বিয়ের অনুষ্ঠানের সমস্ত আচার পালন করেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
বরের নাম শেরু। শেরুর দেখাশোনা করেন মনিতা নামে এক ব্যক্তি। শেরু প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, গত আট বছর ধরে শেরু তাদের কাছে রয়েছে। শেরুর বিয়ে নিয়ে মনিতা এবং তার স্বামী দু’জনেই উৎসাহী।
মনিতা আরও বলেন, ‘গায়েহলুদের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া, নাচগান কিছুই বাদ যায়নি তাদের বিয়েতে।’
তিনি জানান, বিয়ে উপলক্ষে ১০০ জনকে নিমন্ত্রণও জানানো হয়েছিল। ২৫ জনকে বিয়ের কার্ড পাঠালেও বাকিদের অনলাইন মাধ্যমে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন শেরু ও সুইটির বাবা-মা।
নিমন্ত্রিত অতিথিদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে মনিতা বলেন, ‘কেউ কেউ খুব পছন্দ করেছেন, কেউ আবার পছন্দ করেননি। কিন্তু বাবা-মা হিসাবে আমরা খুশি। কে কী ভাবলেন তা নিয়ে কিছু যায় আসে না।’
তবে, সারমেয়দের বিয়ের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও ভারতে বহু বার কুকুরদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে উত্তর প্রদেশের কৌসাম্বি জেলায় বিয়ে দেওয়া হয় ‘শগুন-শগুনিয়া’র।
মালাবদল থেকে বিদায়- হিন্দু মতে বিয়ের সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। পাঁচ হাজার অতিথিকে নিমন্ত্রণও জানানো হয়েছিল এই অনুষ্ঠানে।
২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের হামিরপুর জেলার এক গ্রামে বিয়ে দেওয়া হয় ভুরি এবং কাল্লুর। বিয়ে উপলক্ষে বর কাল্লুকে ১১ হাজার টাকা নগদ দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে বর এবং কনেপক্ষের তরফে ৫০০ জন অতিথিকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
অতিমারি চলাকালীন কেরলের এক দম্পতি তাদের পোষ্য কুকুর ‘অ্যাসিড’-এর বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অ্যাসিডকে যিনি প্রশিক্ষণ দেন, তার মারফত অ্যাসিডের জন্য পাত্রীও খুঁজে ফেলেছিলেন দম্পতি। কনের নাম জাহ্নবী। বিয়ের মেনুর তালিকায় ছিল শুধু চিকেন বিরিয়ানি। কারণ, চিকেন বিরিয়ানি খেতেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে অ্যাসিড।
এমএইচ
