যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার। নির্বাচনকে ঘিরে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা আর উৎকন্ঠা। নির্বাচনের দিন ব্যপক সহিংসতার আশঙ্কায় সারা দেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা গুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২৮ অক্টোবর স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্বামীর উপর সন্ত্রাসী হামলার পর পুলিশসহ সকল গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে সরকারের “রেড এ্যালার্ট” নোটিস পাঠানো হয়।
ওই বার্তায় সারা দেশে সহিংসতার ঘটনা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি এবং সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়। সাধারণ ভোটাররাও উগ্রপন্থিদের সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার করছে। অনেকে মনে করছেন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হবার পর গত বছর ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সমতা রয়েছে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে। একটি আসন হারালেই কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ হারাবে ডেমোক্রেটরা। ফলে আগামী দুই বছর বাইডেনের জন্য হবে অত্যন্ত খারাপ সময়।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন চার বছরের জন্য। দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হয় মধ্যবর্তী নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও সংসদীয় ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই মধ্যবর্তী নির্বাচন মূলত ক্ষমতা ধরে রাখা আর জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের অংশ।
২০২০ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন ডেমোক্রেট নেতা অভিজ্ঞ রাজনীতিক জো বাইডেন। দায়িত্ব নেয়ার দুই বছর পর আগামী ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই দিন জনগণ আরও একবার ভোট দিয়ে জানিয়ে দেবেন সরকারের উপর তাদের আস্থা কতটুকু।
যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ৫৩৫ জন। তারা কংগ্রেস সদস্য হিসেবে পরিচিত। মার্কিন কংগ্রেস তথা পার্লামেন্টের দুটি কক্ষ। উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস (প্রতিনিধি পরিষদ)। আইন তৈরির জন্য কংগ্রেসের এই দুটি কক্ষ আলাদাভাবে কাজ করে। সিনেটের সদস্য সংখ্যা ১০০ জন। প্রতিটি রাজ্য দুজন করে সিনেট সদস্য নির্বাচিত করে। তারা সিনেটর হিসেবে পরিচিত এবং নির্বাচিত হন ছয় বছরের জন্য। প্রতি দুই বছর পরপর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে নির্বাচন হয়। অর্থাৎ এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ১০০টি আসনের মধ্যে ৩৫টিতে নির্বাচন হবে।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনে খারাপ ফল করে। আর প্রত্যাশা অনুযায়ি জো বাইডেন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে না পারায় এবার রিপাবলিকানদের আসন সংখ্যা বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এ নির্বাচন ঘিরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পাশাপাশি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেও মাঠে নামিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে ডেমোক্রেটিক শিবির। তারপরও উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন শিবির। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেরই নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন তারা।
একাধিক সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে অপরাধজনিত সমস্যার সমাধানে ভোটাররা ডেমোক্র্যাটদের তুলনায় রিপাবলিকানদের উপর বেশি আস্থা রাখছেন। ভোটারদের মন জয় করতে বাইডেন এখন ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে তার প্রচারণা বাড়াচ্ছেন। অন্যদিকে বসে নেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনআল্ড ট্রাম্পও। প্রতিদিনই তিনি বিভিন্ন রাজ্যে সমাবেশ করছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং জো বাইডেনের দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরে ভোটারদের মন জয় করতে চাইছেন।
কয়েকমাস আগেও যেসব আসনে ডেমোক্রাটরা সমীক্ষায় এগিয়ে ছিলো সেসব জায়গায়ও জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে। কংগ্রেসের কোনো একটি কিংবা উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ার অর্থ হচ্ছে জো বাইডেনকে আগামী দুই বছর ব্যাপক চাপ এবং চ্যালেঞ্জের মুখে থাকতে হবে। তখন গর্ভপাত, পুলিশে সংস্কার, পারিবারিক ছুটিসহ যেসব ইস্যুতে বাইডেন অগ্রাধিকারভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করতে চান সেগুলো রিপাবলিকানরা আটকে দিতে পারবে। পাশাপাশি তারা অভিবাসন ও ব্যয় কমানোর মতো আইন প্রণয়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠলে তারা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ইমপিচমেন্ট করার চেষ্টা করবে এমন ঘোষনাও দিয়ে রেখেছে আগে থেকেই।
তবে দুই দলের জয়-পরাজয়ের হিসেবের বাইরে সাধারণ মানুষ ভাবছে নির্বাচনী সহিসতা নিয়ে। ভোট কেন্দ্রে বা প্রার্থীদের উপর হামলার আশঙ্কা বেড়েই চলেছে। নিরাপদে ভোটদানের বিষয়ে সারা বিশ্বের মডেল ছিল যে দেশ, সেই যুক্তরাষ্ট্রেই এখন নির্বাচনী সহিসতার আশঙ্কায় “রেড এ্যালার্ট” সেটা মানতে কষ্ট হচ্ছে সাধারণ আমেরিকানদের।
টিএস