ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

গুগল, অ্যাপল ও অ্যামাজনের কাছ থেকে আরও বেশি কর আদায়ে চুক্তি

প্রকাশিত: ১০:১৪, ৬ জুন ২০২১

গুগল, অ্যাপল ও অ্যামাজনের কাছ থেকে আরও বেশি কর আদায়ে চুক্তি

অনলাইন ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ জি৭ জোটের দেশগুলো গুগল, অ্যাপল ও অ্যামাজনের মত শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি জায়ান্ট ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আরও বেশি কর আদায়ে একটি মাইলফলক চুক্তিতে পৌঁছেছে । শনিবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বৈশ্বিক করারোপের এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বলছে, ‘ট্যাক্স হেভেন’ হিসেবে পরিচিত নিম্ন করের দেশগুলোতে কোম্পানিগুলোর মুনাফা স্থানান্তরের পদক্ষেপকেও জি৭ নিরুৎসাহিত করতে প্রণোদনা কমাবে। রয়টার্স লিখেছে, এসব বৃহৎ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কর হিসেবে আরও বেশি অর্থ সংগ্রহে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা আলোচনা অবশেষে সিদ্ধান্তে রূপ নিয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানির ওপর ন্যুনতম ১৫ শতাংশ বৈশ্বিক করপোরেট কর আরোপের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতির দেশগুলোর এই জোটের অর্থমন্ত্রীরা। শনিবার লন্ডনে জি৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের এই বৈঠক হয়। মহামারী শুরুর পর এই প্রথম এসব দেশের অর্থমন্ত্রীরা মুখোমুখি বসেছিলেন। রয়টার্স বলছে, এমন সিদ্ধান্তের ফলে বছরের পর বছর ধরে নিজ দেশের উচ্চ হারের কর এড়াতে প্রায় সব বৃহৎ কোম্পানির নিম্ন হারের করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত অফশোর দেশগুলোতে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। আট বছর ধরে চলা আসা আলোচনার পরিণতি এই চুক্তি, যা মাস কয়েক আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের নতুন একটি প্রস্তাবের ফলে গতি পায়। রয়টার্স আরও বলছে, ফেইসবুক মনে করছে এই চুক্তির ফলে অনেক দেশে এখন আরও বেশি কর দিতে হবে তাদের। অর্থমন্ত্রীরা বৈশ্বিক করারোপে যৌথভাবে কাজ করতে এবং অন্যান্য দেশকেও জোটের এই পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত করতে আহ্বান জানানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। করোনাভাইরাস মহামারীর এই আর্থিক সঙ্কটের সময় এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকারগুলোর হাতে নতুন করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আসবে। রয়টার্স লিখেছে, বিশ্বব্যাপী জমজমাট ব্যবসা করা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কর হিসেব বিপুল এই অর্থ পাওয়া গেলে তা আর্থিক সঙ্কটে থাকা দেশগুলোর মহামারী মোকাবেলায় ব্যয় করার সুযোগ তৈরি হবে। শনিবারের মাইলফলক এই চুক্তির ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যেসব দেশের বাজারে পণ্য ও সেবা বিক্রি করবে, সেসব দেশে তাদের আরও বেশি কর দিতে হবে। জি৭ দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান ও কানাডা। শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতির এসব দেশের বাইরে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হলেও এই জোটে নেই। গুগল, অ্যাপল, অ্যামাজন ও ফেইসবুকের মত বহুজাতিক এসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হলেও দেশটিও জি৭ জোটের দেশগুলোর সঙ্গে বৈশ্বিক করারোপের বিষয়ে একমত হয়েছে। এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে লন্ডনের বৈঠকের পর বৃটেনের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, বৈশ্বিক ডিজিটাল যুগের উপযোগী একটি বৈশ্বিক কর ব্যবস্থা সংস্কারে জি৭ জোটের অর্থমন্ত্রীরা একমত হয়েছেন। সেন্ট্রাল লন্ডনের বার্কিংহাম প্যালেসের কাছে সুসজ্জিত ১৯ শতকের একটি ম্যানসনে দু’দিনের এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সুনাক। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার পর নতুন এই কর ব্যবস্থা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে সুষম প্রতিযোগিতা বজায় রাখতেও ভূমিকা রাখবে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন এই চুক্তির বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ‘অবিস্মরণীয় প্রতিশ্রুতি’ শব্দ দুটি ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, এই চুক্তির ফলে বৈশ্বিক কর ব্যবস্থায় এতদিন ধরে চলে আসা অসম প্রতিযোগিতা থামবে। জার্মান অর্থমন্ত্রী ওলাফ শোলজ বিশ্বজুড়ে করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত দেশগুলোর জন্য এই চুক্তি খারাপ সংবাদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বৈঠকে অন্যান্য দেশও যাতে বহুজাতিক বৃহৎ কোম্পানির কাছ থেকে কর আদায়ে এমন ব্যবস্থায় যুক্ত হয় সেজন্য চাপ তৈরির চেষ্টা করা হবে। ভেনিসে আগামী মাসে জি-২০-এর বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হবে এবং এই জোটে থাকা অনেকগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর আঙ্গিকে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর বিষয়ে ইতিমধ্যে কথা উঠতে শুরু করেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। এই চুক্তি যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান দেশগুলোর জাতীয় ডিজিটাল সেবা করের অবসান ঘটাবে যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল। যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছিল, মার্কিন কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য করেই ইউরোপে এমন কর বসানো হয়েছিল। ১৯২০ সালের একটি আইন দিয়েই চলছে বর্তমানে বৈশ্বিক কর ব্যবস্থা। এ আইনের ফাঁক গলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিশেষ করে প্রযুক্তি জায়ান্টরা দূর থেকে অনলাইনে পণ্য ও সেবা বিক্রি করে যে মুনাফা করে, তা নিম্ন কর হারের দেশগুলোতে স্থানান্তর করে নিজেদের পকেট ভারী করে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে এমন সুবিধা দিতে বিশ্বের অনেক ‘ট্যাক্স হেভেন’ হিসেবে পরিচিত দেশ একেবারে নামমাত্র করপোরেট কর হার নির্ধারণ করে রেখেছে। এমন সুযোগই বছরের পর নিয়েছে অ্যাপল, গুগল, মাইক্রোসফটসহ বড় বড় দামি ব্র্যান্ডগুলো। এসব কোম্পানি করপোরেট কর কম দিতে হয় এমন দেশের শাখা অফিস খুলে সেখান থেকে তাদের লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আইন না ভেঙেই কোম্পানিগুলো যেসব দেশ থেকে তাদের মূল কার্যক্রম পরিচালিত হয়, সেখানে কর না দিয়েই মুনাফা সরিয়ে ফেলতে পারে। লন্ডনে হওয়া এই চুক্তি কোম্পানিগুলোর এমন পদক্ষেপে যতি টানবে।
×