অনলাইন ডেস্ক ॥ ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলেমানি মার্কিন হামলায় নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে; ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইরান।
এক বিবৃতিতে ইরান জানিয়ে দিয়েছে,তারা আর তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, মজুদ, গবেষণা বা উন্নয়ন সীমিত রাখার শর্ত মেনে চলবে না।
রবিবার ইরানের পার্লামেন্টে এক বৈঠকের পর চুক্তি থেকে সরে আসার ওই ঘোষণা আসে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। তাদের অভিযোগ ছিল ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে, যা বরাবরই অস্বীকার করেছে তেহরান।
এ নিয়ে উত্তেজনার এক পর্যায়ে ২০১৫ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকার সময় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে ইরানের।
চুক্তির শর্ত ছিল, ইরান তাদের কর্মসূচিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি সীমিত রাখবে এবং যে কোনো স্থাপনায় যে কোনো সময় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিদের পরিদর্শন করতে দেবে।
ওই চুক্তি হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে তাদের দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়।
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ওই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ ও একপেশে’ আখ্যায়িত করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালের মে মাসে চুক্তি থেকে সরে যায়। ইরানের ওপর তখন নতুন করে অবরোধ আরোপ করা হয়।
বিবিসির সাংবাদিক জোনাথন মার্কাসের ভাষায়, ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পরেঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি লাইফ সাপোর্টে চলে গিয়েছিল। এখন ইরানের ঘোষণায় তার মৃত্যু ঘটল।
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা চেয়েছিলেন, এখন আমরা পারমাণবিক চুক্তির ঠিক সেই পরিণতিটাই দেখতে পাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইরান তা ঠিকঠাক মানছে না বলে অভিযোগ ছিল, তা নিয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য পরাশক্তিগুলোরও অসন্তোষ ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধানকে হত্যার যে পথে হাঁটলেন, তাতে বাকি মিত্ররাও হতবাক। তার ওই পদক্ষেপ ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।”
যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পরও স্বাক্ষরকারী বাকি দেশগুলো ইরানের সঙ্গে সমঝোতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল। এখন ইরান সেই চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন দেশগুলোর নেতারা।
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন রবিবার এক যৌথ বিবৃতিতে ইরানকে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “উত্তেজনা প্রশমন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত।”