
ছবি: আল জাজিরা
ইসরাইলি অবরোধে মৃত্যুপ্রায় গাজার মানুষ এখন পচা রুটি খেয়ে জীবন টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। বাজারগুলোতে নেই তাজা খাবার, নেই নিরাপদ পানি। যা পাওয়া যাচ্ছে, তা নষ্ট ও দুর্গন্ধযুক্ত—তবুও বাধ্য হয়ে তা খাচ্ছেন গাজার বাসিন্দারা। কারণ গাজা আজ দুর্ভিক্ষের শেষ সীমায় পৌঁছেছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে হৃদয়বিদারক এই চিত্র। গাজার আল-সাহাবা বাজার থেকে এক ব্যাগ আটা কিনেছিলেন আহমেদ ডালুল। তবে সেই আটা ছিল পোকামাকড়ে ভর্তি এবং দুর্গন্ধযুক্ত। ডালুল বলেন, 'গন্ধটি অসহনীয় ছিল। আমার সন্তানদের আর এই বিষ খাওয়াতে চাই না।' অথচ উপায় না থাকায় তাকে সেই নষ্ট আটা কিনতেই হয়েছে।
৫০ বছর বয়সি জিহান আসলিমও একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। স্থানীয় বেকারি থেকে কেনা রুটি এতটাই নষ্ট ছিল যে, খাওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি দুঃখ করে বলেন, 'বাজারগুলো পচা আটা দিয়ে ভরে গেছে, তবুও তা কিনতে হচ্ছে অকল্পনীয় দামে।'
কেউ কেউ নষ্ট রুটির দুর্গন্ধ কমাতে ভিনেগারে চুবিয়ে খাচ্ছেন। ৬০ বছর বয়সি ইউসরা হামাদা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, 'শুধু পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য বিষাক্ত খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।'
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ প্রধান জোনাথন হুইটল সতর্ক করে জানিয়েছেন, গাজায় পূর্ণমাত্রার দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে। মার্চের শুরু থেকে ইসরাইলের পূর্ণ অবরোধের কারণে খাদ্য, পানি ও ওষুধ প্রবেশ প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে গাজার শেষ বেকারিটিও ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ধ্বংস হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য সাহায্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) বাধ্য হয়ে তাদের মোবাইল বেকারি সরিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে তারা দিনে মাত্র ৫৯ হাজার রুটি উৎপাদন করছে, যা পুরো গাজার মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য।
ওসিএইচএর গাজা প্রধান শাদি জানিয়েছেন, 'আমরা রুটি তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তবে চরম আটা সংকটের কারণে উৎপাদন খুবই সীমিত।'
দুর্ভিক্ষ, খাদ্য সংকট এবং অবরোধের এই ভয়াবহ চিত্র গাজাকে এক অনিশ্চিত ও বেদনাদায়ক ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এসএফ