
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি উত্তেজনার পর অবশেষে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসেছে। ওমানের রাজধানী মাস্কটের উপকণ্ঠে অনুষ্ঠিত হয় এই বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক। প্রথম দফার আলোচনা চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। বৈঠক শেষে উভয় পক্ষ জানায়, আগামী ১৯ এপ্রিল ফের আলোচনা হবে।
ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগোচি এই আলোচনাকে "গঠনমূলক" বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, আলোচনার সময় দুই দেশের মধ্যে চার দফা বার্তা বিনিময় হয় এবং ওমানের মধ্যস্থতায় বৈঠকের একপর্যায়ে আরাগোচি ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সরাসরি কথোপকথনে অংশ নেন— যা ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে একটি বিরল ঘটনা।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আলোচনার মূল কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল পরমাণু কর্মসূচি ও ইরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও বৈঠকের সময় উইটকফ বলেন, "আমাদের অবস্থান হলো— ইরানের পরমাণু কর্মসূচির অবসান চাই, তবে প্রয়োজনে আপোষের পথও খোলা।"
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারের আলোচনায় দুটি বিষয় ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ— ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমা এবং নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ। ২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী ইরান ৩.৬৭ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারতো, কিন্তু বর্তমানে তারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করছে—যা পরমাণু অস্ত্র তৈরির পর্যায়ের কাছাকাছি।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একসময় বলেছিলেন, “আমি চাই ইরান একটি চমৎকার, মহান, সুখী দেশ হোক— তবে তাদের পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারে না।” উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাতিল করেছিল, যার পর থেকেই উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরানকে শুধুমাত্র সামরিক দিক থেকে পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে না, বরং সমস্ত পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করতে হবে। এছাড়াও তারা তেহরানের মিত্রদের প্রতি সমর্থন বন্ধ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সীমিত করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাদের বেসামরিক পরমাণু শক্তির বিকাশের অধিকার তারা ছাড়বে না এবং তাদের পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা ক্ষমতা কমানোর প্রচেষ্টারও তীব্র বিরোধিতা করছে।
এই প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলোচনার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে উভয় পক্ষ কতটা ছাড় দিতে প্রস্তুত তার উপর। সফল আলোচনার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও উত্তেজনা কমিয়ে আনার একটি নতুন পথ খুলে যেতে পারে— যা বিশ্বশান্তির দিকেও নিয়ে যেতে পারে, অথবা সামান্য ভুলেই উল্টো দিকেও মোড় নিতে পারে বিশ্ব রাজনীতি।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/bVuhVNc86HA?si=J8560lL19vt1ubsp
এম.কে.