ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

ইরানে হামলা হবে ইসরাইলের নেতৃত্বে, ঘোষণা ট্রাম্পের, পাল্টা বার্তা রাশিয়ার,ইরান একা নয়

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ১১ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১২:২৫, ১১ এপ্রিল ২০২৫

ইরানে হামলা হবে ইসরাইলের নেতৃত্বে, ঘোষণা ট্রাম্পের, পাল্টা বার্তা রাশিয়ার,ইরান একা নয়

মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। ফিলিস্তিনে বর্বরতার জন্য অভিযুক্ত ইসরাইল এবার চোখ রেখেছে ইরানের দিকে। আর সেই পরিকল্পনার নেতৃত্বে থাকবে ইসরাইল এমনটাই জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই ঘোষণার পর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় কঠোর বার্তা দিয়েছে রাশিয়া। বলেছে, “ইরান একা নয়”।

ফিলিস্তিনিদের রক্তপিপাসু হায়না ইসরাইলের পরম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র শুধু সমর্থন আর প্রশ্রয়ে থেমে নেই, মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ছুড়িয়ে দিয়েছে যুদ্ধের দামামা। ২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে ইয়েমেনে হামলা শুরু হলেও, নিয়মিত বিরতিতে তা অব্যাহত রেখেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যদিও মূল লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্যে স্বাধীনতাগামী ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের প্রকাশ্য মদতদাতা ইরান। হুমকি-ধমকি আর কূটনৈতিক কৌশলে ইরানকে কোণঠাসা করতে ব্যর্থ হয়ে শেষমেশ মধ্যস্থতার পথেই উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে ১২ এপ্রিলের কূটনৈতিক বৈঠকের ঠিক আগে হঠাৎ করেই ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হুমকি উচ্চারণ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফলে প্রশ্ন উঠছে এই মধ্যস্থতা কি শুধুই লোক দেখানো, না কি আলোচনার আগে তেহরানকে চাপে রাখার নতুন কৌশল?

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন,“ইরানের ক্ষেত্রে যদি সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার হয়, আমরা সে পথেই হাঁটবো। অবশ্যই এক্ষেত্রে ইসরাইল এ পদক্ষেপের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকবে। তারাই নেতৃত্বে থাকবে। কিন্তু আমাদেরকে কেউ নেতৃত্ব দেবে না। যা মনে হয়, তাই করব আমরা।”

ওভাল অফিস থেকে এমন হুমকি দিলেন ট্রাম্প, যখন এ ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে স্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচজি। এখানেই শেষ নয় ট্রাম্পের বক্তব্যের দিনে একই সুরে কথা বলেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেক্সেদ।

তিনি বলেন,“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগেই স্পষ্ট করেছেন ইরানকে পারমাণবিক বোমা বা অস্ত্রের মালিক হতে দেওয়া উচিত হবে না। এটি প্রেসিডেন্ট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করবেন বলে আমরা আশাবাদী। তবে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মোকাবেলায় প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রস্তুতি রয়েছে।”

ইরানের সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি নিতে যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে ভারত মহাসাগরের ব্রিটিশ দ্বীপ দিয়াগো গার্সিয়ায় ছয়টি স্টিল বিটু বোম্বার মোতায়েন করেছে। এই মডেলের যুদ্ধবিমান ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ধ্বংসে পারদর্শী। গত মাসেই ইরান তার ভূগর্ভস্থ মজুদের ভিডিও প্রকাশ করায়, ধারণা করা হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করেই এই পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

গাজা, লেবানন, ও ইয়েমেনে পাল্টাপাল্টি হামলার সুযোগে ইরানে আঘাত হানার আশঙ্কা দিন দিন তীব্র হয়ে উঠছে। তবে এই পরিস্থিতিতে ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া। সতর্ক করে দিয়েছে, “ইরানে বোমা ফেলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।”

এছাড়া সৌদি আরব, কাতার, আমিরাত ও কুয়েত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তাদের আকাশসীমা ইরানে হামলার জন্য ব্যবহার করতে দেবে না যুক্তরাষ্ট্রকে।

এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক চালে মাত দিতে সৌদি সফরে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বৈঠক করেছেন সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সঙ্গে।

তেহরানও হাত গুটিয়ে বসে নেই। রাডার ফাঁকি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিটু বোম্বারের গতিবিধির ভিডিও প্রকাশ করে সতর্ক করেছে ইরান। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ড্রোনবাহী রণতরী শহীদ বাহমান বাকেরী, যেটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সামরিক অবস্থানে হামলার জন্য বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত।

ইসরাইলের গাজা অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ঠেকাতে লোহিত সাগরে থাকা মার্কিন রণতরীর মোকাবেলায় পাল্টা ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে যৌথ নৌ-মহড়াও চালিয়েছে ইরান।


মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যুদ্ধের শঙ্কা এখন বাস্তব। ট্রাম্পের হুমকি, ইসরাইলের আগ্রাসী ভুমিকা ও রাশিয়ার পাল্টা অবস্থানসব মিলিয়ে পরিস্থিতি এক উত্তপ্ত সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্ব এখন তাকিয়ে, আলোচনার টেবিলে বসে কি শান্তির পথ খুঁজে পাবে বিশ্বের পরাশক্তিগুলো?

 

সূত্র:https://tinyurl.com/37v67z52

আফরোজা

×