ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

ইরানের জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত রাশিয়া

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ১০ এপ্রিল ২০২৫

ইরানের জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত রাশিয়া

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে যখন বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে, ঠিক তখনই রাশিয়ার পক্ষ থেকে আসলো এক জোরালো বার্তা। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ স্পষ্ট জানিয়ে দেন— ইরানের পাশে রয়েছে রাশিয়া এবং তেহরানের পারমাণবিক সংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে প্রস্তুত তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘোষণার মাধ্যমে রাশিয়া শুধু ইরানকে সমর্থন দিচ্ছে না, বরং পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গে নিজেদের বিরোধকেও আরও স্পষ্ট করছে। বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো ইরানকে চাপ দিয়ে চলেছে, তখন রাশিয়ার এমন অবস্থান নতুন কূটনৈতিক ভারসাম্যের ইঙ্গিত দেয়।

২০১৫ সালে ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও জার্মানি মিলে স্বাক্ষর করে ঐতিহাসিক জেসিপিওএ (Joint Comprehensive Plan of Action) চুক্তি, যার আওতায় ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখতে রাজি হয়েছিল। বিনিময়ে পশ্চিমা বিশ্ব তুলে নেয় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা।

কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে সেই চুক্তি থেকে সরে যান এবং আবারও কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেন ইরানের ওপর। এর জবাবে ইরান ধীরে ধীরে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের মাত্রা বাড়াতে থাকে।

২০২5 সালে ট্রাম্পের আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর "সর্বোচ্চ চাপনীতি" ফের কার্যকর হয়। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ইরান যদি নতুন চুক্তিতে না আসে, তবে সামরিক হামলা চালানো হতে পারে। এতে করে কূটনৈতিক সমাধানের পথ অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়ে।

ইরান এই হুমকির জবাবে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জানিয়ে দেয়—যুক্তরাষ্ট্র আগ্রাসন চালালে তেহরান কড়া প্রতিশোধ নেবে। তাদের বক্তব্য, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস নয়।

এই উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে রাশিয়ার অবস্থান হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ। পেসকভ জানিয়েছেন, রাশিয়া ইরানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে আছে এবং কূটনৈতিকভাবে শান্তিপূর্ণ সমাধানে আগ্রহী।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়ার এই কৌশল শুধু ইরানকে রক্ষা করাই নয়, বরং বৃহত্তর পরিসরে চীন-রাশিয়া-ইরান জোট গঠনের সম্ভাবনাকেও জোরালো করছে। এই জোট গঠিত হলে তা বদলে দিতে পারে বিশ্ব রাজনীতির ভারসাম্য।

সম্প্রতি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি কোনো আলোচনায় যাবে না, তবে ওমানের মধ্যস্থতায় পরোক্ষ আলোচনা এখনো সম্ভব।

মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যদি সামরিক সংঘাত শুরু হয়, তাহলে তা শুধুমাত্র ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র নয়, পুরো অঞ্চল ও বিশ্ব রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

রাশিয়া বলছে, তারা শান্তি চায়। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। আর ইরান বলছে, তারা চায় সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে। কিন্তু এই কথাগুলোর আড়ালে যে একটি ভয়াবহ সংঘাত লুকিয়ে আছে, তা আর অজানা নয় কারও।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/GOAgig0z9fQ?si=7rNV9EHH19tWn_ON

এম.কে.

×