
সংগৃহীত
ইরানের রিয়াল মুদ্রা ডলারের বিপরীতে বিপর্যস্ত হয়ে ১ মিলিয়ন রিয়াল ছাড়িয়ে গিয়েছে, যা দেশটির ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তর। ইরানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে চরম সংকটময়। এই পতনের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, তেলের রফতানি কমে যাওয়া এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি।
দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং গ্যাসোলিনের দাম বৃদ্ধির গুজবও উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, যখন প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান সংকটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমানভাবে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, "আমরা সমান ভিত্তিতে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির পরিবর্তে আলোচনা চাই।"
ইরানের অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে রয়েছে, বিশেষত ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের একপাক্ষিক সিদ্ধান্তের পর, যখন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। এর পর থেকে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি আরও ত্বরান্বিত করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে।
এ অবস্থায়, ইরানকে তেলের বিক্রি সীমিত হওয়া এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। দেশটির জনগণের জন্য এই মুদ্রা পতন একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে।
ইরানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিনদিন আরও জটিল হয়ে উঠছে, বিশেষ করে ইরানের রিয়াল মুদ্রা এক নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে, ডলারের বিপরীতে এটি এখন ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তরে। শনিবার ব্যবসায়ীরা যখন কাজ শুরু করেন, তখন এক ডলারের বিপরীতে রিয়াল পৌঁছেছে ১,০৪৩,০০০ রিয়াল। এটি একেবারে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, বিশেষত যখন তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।
নওরোজ, পার্সি নববর্ষের সময় এক মুদ্রার বাজারে রিয়াল এক মিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছিল, কারণ তখন অধিকাংশ মুদ্রা ব্যবসায়ী তাদের দোকান বন্ধ করে দিয়েছিল এবং সড়কে অপ্রাতিষ্ঠানিক লেনদেন শুরু হয়েছিল। এর ফলে বাজারে চাপ আরও বাড়ে। ব্যবসায়ীরা যখন আবার তাদের কাজ শুরু করল, তখন রিয়ালের মূল্য আরও পতন ঘটে।
ইরানের অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প একপাক্ষিকভাবে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন, তখন থেকে দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর পর ট্রাম্প তার "সর্বোচ্চ চাপ" কৌশল চালু করেন, যার ফলে ইরান এবং ইরানের তেলবাজারে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান শনিবার মন্তব্য করেছেন যে, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমানভাবে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে তিনি এটি পরিষ্কার করেননি যে, ইরান সরাসরি আলোচনা করতে রাজি হবে কিনা। তিনি বলেন, "আজ আমেরিকা শুধু ইরানকে অপমান করছে না, বরং পৃথিবীকে অপমান করছে।"
এদিকে, পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগে অভিযুক্ত করে আসছে। তবে ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে। ২০১৫ সালে ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। তবে ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রশাসন চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পরপরই ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি দ্রুততর করে তোলে।
ইরানের সুপ্রীম লিডারের এক উপদেষ্টা, আলি লারিজানি সম্প্রতি সতর্ক করে বলেন, যদিও ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না, তবে যদি তাদের উপর আক্রমণ হয়, তাহলে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগিয়ে যেতে হতে পারে।
এ পরিস্থিতি শুধু ইরানের জন্যই নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্যও একটি বড় সংকেত হয়ে উঠেছে। দেশটির অর্থনৈতিক চাপ এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা যে কোনো মুহূর্তে আরও বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্র: আল-জাজিরা
আফরোজা