
ছবি: সংগৃহীত
“আল্লাহু আকবার” ধ্বনির সাথে ভেসে আসছে মুয়াজ্জিনের কান্না। ইসরাইলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজার আকাশে ফজরের আযান ছড়িয়ে পড়লেও, তাতে মিশে আছে শোক, ব্যথা আর বেদনার সুর। পবিত্র রমজান মাসে সেহরির সময় যখন গাজার মানুষ খাবার মুখে তুলতে যাচ্ছিল, তখনই ইসরাইলের যুদ্ধবিমান থেকে বোমা বর্ষিত হয়। সেই শুরু, এখনো থামেনি ধ্বংসযজ্ঞ।
হাজারো মানুষের মৃত্যু হলেও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলছেন, গাজায় তাদের অভিযান কেবল শুরু হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করতেও একবার কাঁপছে না দখলদার বাহিনীর হাত। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় ক্লান্ত, বিধ্বস্ত মানুষ এখন নীরব। বিশ্ব নেতারা শুধু নিন্দা জানিয়ে দায় সারলেও, গাজার জনগণ তাদের সব অভিযোগ জমা রাখছেন কেয়ামতের দিনের বিচারের জন্য।
দেড় বছরের যুদ্ধে ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যার পর, কিছুদিন আগে গাজার কিছু অংশে ফিরে আসতে শুরু করেছিলেন বাসিন্দারা। নিজেদের ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে তারা রমজানের আনুষ্ঠানিকতা পালন শুরু করেছিলেন। কিন্তু কোনো রকম সতর্কতা ছাড়াই আবারও গাজায় আগ্রাসন নামিয়ে এনেছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। একের পর এক বোমা হামলায় রেহাই পাচ্ছে না গাজার কোনো অঞ্চলই।
ইসরাইলি হামলায় স্বজন হারানো পরিবারগুলো এখন মরদেহের সন্ধানে ঘুরছেন ধ্বংসস্তূপ আর মর্গে। বহু পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, যেখানে কেউই আর বেঁচে নেই। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রামি আব্দুর মতো বহু মানুষের কথা, যারা নিজেরা বেঁচে থাকলেও বাবা, মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন। কিন্তু তবুও গাজার জনগণের দৃঢ় ঘোষণা— “ইসরাইল হয়তো আমাদের হত্যা করতে পারে, আমাদের শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে পারে, কিন্তু আমাদের ভূমি থেকে ফিলিস্তিনিদের কখনোই উপড়ে ফেলতে পারবে না।”
গাজার উপর চালানো এই আগ্রাসনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য যেন শিশুদের নিশ্চিহ্ন করা। নতুন প্রজন্মকে মুছে ফেলতেই হাসপাতাল, বাসাবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালানো হচ্ছে। জাতিসংঘের একজন চিকিৎসকের বাসভবনে হামলায় পুরো পরিবার নিহত হয়েছে। মৃতদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শিশুটির বয়স ছিল মাত্র তিন দিন।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়— এসব নিষ্পাপ শিশুর কী দোষ? কেন তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে? সেই প্রশ্নের জবাব দিতে পারছে না কেউই।
যারা ইসরাইলের হামলায় মারা যাচ্ছেন না, তারা মরছেন ক্ষুধায়। এক মাসের বেশি সময় ধরে গাজাকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ রেখে সব ধরনের খাদ্য ও জরুরি পণ্য সরবরাহ বন্ধ রেখেছে ইসরাইল। খান ইউনিসের এক ফিলিস্তিনি নারী কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “রমজানের দিনেও আমার সন্তানরা না খেতে পেয়ে মারা গেছে। যেভাবে আমার সন্তানদের মরতে হয়েছে, একদিন ঠিক সেই ভাগ্যই ভোগ করবে নেতানিয়াহুর সন্তানেরা।”
ধ্বংসযজ্ঞের এই ভয়াবহতায় কাঁদছে গাজাবাসী, আর তাদের কান্না ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/xBDBmJ0VbRg?si=ljDsd_0pcXKicCqe
এম.কে.