ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

নেতানিয়াহুর সতর্কতা

গাজায় নতুন হামলা কেবল শুরু

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ১৯ মার্চ ২০২৫

গাজায় নতুন হামলা কেবল শুরু

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

এক রাতেই ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরাইলের চালানো হামলায় নিহত হয়েছেন চার শতাধিক মানুষ। আহত হয়েছেন আরও শত শত ফিলিস্তিনি। এ ছাড়া হামলায় ধসে পড়া ভবনের নিচে আরও অনেক মানুষ আটকে আছেন। এমন অবস্থায় গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের গণহত্যা পুনরায় শুরু করাকে কেবল ‘শুরু মাত্র’ বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতের আলোচনা হবে তীব্র আক্রমণের মধ্যে। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন হাজার হাজার জনতা। বুধবার তারা তেলআবিবের হাবিমা স্কয়ারে বিক্ষোভ করেছেন। প্রায় তিন হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিক্ষোভের মূল কারণ হলো- নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ মিয়ারা এবং গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে অপসারণের পরিকল্পনা। এই পদক্ষেপের পেছনে নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কাতার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুকে মিস্টার অ্যাব্যান্ডনমেন্ট (অবাঞ্ছিত) ঘোষণা করেন এবং তেলআবিবের জাতীয় থিয়েটার ভবনের দেয়ালে এই বার্তা প্রদর্শন করেন।
এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে প্রোটেক্টিভ ওয়াল ফর ইসরাইল নামক একটি সংগঠন। তারা নিজেদের ইসরাইলের সুরক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দাবি করে আসছে। এই সংগঠনে সেনা, পুলিশ, মোসাদ এবং শিন বেতের ১৬৯ সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। এর আগে মঙ্গলবার ভোররাতে আকস্মিকভাবে গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালানো শুরু করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় অনেক লোক সেহরি খাচ্ছিলেন, তখনই গাজায় হামলা ও বিস্ফোরণ শুরু হয়। বর্বর এই হামলায় কমপক্ষে ৪০৪ জন নিহত, ৫৬২ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়। ইসরাইলি হামলায় নতুন করে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন গাজার বাসিন্দারা। চারদিকে লাশের সারি, অসংখ্য হতাহত মানুষ। কিন্তু নেই যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা। এমনকি মিলছে না ব্যথানাশক ওষুধও। অনেক মানুষের অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই। গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজায় এটিই সবচেয়ে বড় বিমান হামলা। হামলার পর সামনে আসতে থাকা একের পর এক ছবিতে দেখা যায়, নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে।
ভোররাতে বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। পরে ইসরাইলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যমে সম্প্রচারিত এক টেলিভিশন ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, আমরা যুদ্ধবিরতি কয়েক সপ্তাহের জন্য বাড়িয়েছিলাম, যদিও বিনিময়ে আমরা জিম্মিদের ফেরত পাইনি। তিনি আরও দাবি করেন, আমরা দোহায় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলাম এবং মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবও গ্রহণ করেছি, কিন্তু হামাস সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরাইলি গণমাধ্যম গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, উইটকফ উভয় পক্ষের কাছে একটি হালনাগাদ প্রস্তাব পেশ করেছিলেন, যেখানে ৫০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য পাঁচজন ইসরাইলি বন্দির মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি, মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার এবং তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এরপর হামাস শুক্রবার জানায়, তারা মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। একইসঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়ের জন্য দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা পুনরায় শুরু করার অংশ হিসেবে একজন ইসরাইলি-আমেরিকান সৈন্যের মুক্তি এবং চার দ্বৈত নাগরিকের মৃতদেহ ফেরত দিতে সম্মত হয়েছে।

×