ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্র ভাঙল প্রতিশ্রুতি, ইরান দিলো হুঁশিয়ারি, কী আছে ইসরায়েলের ভাগ্যে?

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ১৮ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৯:৫৬, ১৮ মার্চ ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র ভাঙল প্রতিশ্রুতি, ইরান দিলো হুঁশিয়ারি, কী আছে ইসরায়েলের ভাগ্যে?

ছবি: সংগৃহীত

ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এদিকে, ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। এতে নারী ও শিশুসহ হতাহতের সংখ্যা কয়েক ডজন ছাড়িয়েছে। তবে চুপ করে বসে নেই হুথিরাও। তারা পাল্টা জবাব দিয়েছে মার্কিন ঘাঁটিগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে ফিলিস্তিনের গাজায় আবারও বর্বর হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে নারী ও শিশুসহ নিহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে। গাজা উপত্যকায় ১৯ জানুয়ারি থেকে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর ছিল। চুক্তি অনুযায়ী, সকল বন্দি মুক্তি পেলে দ্বিতীয় ধাপের শান্তি আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পর ইসরাইল ফের হামলা শুরু করে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিড জানিয়েছেন, গাজায় ইসরাইলি হামলা শুরু করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউস একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, "হামাস, হুথি কিংবা ইরান— যারা কেবল ইসরাইলকেই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রকেও ধ্বংস করতে চায়, তাদের সবাইকে মূল্য দিতে হবে। আমরা তাদের নির্মূল করব।" ১৭ মার্চ ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, সকল জিম্মি মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, "৫২৭ দিন ধরে হামাসের হাতে বন্দি রয়েছে আমাদের জনগণ। তাদের মুক্তি না করা পর্যন্ত হামাসের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ চলবে। শত্রুদের প্রতি কোনো দয়া দেখানো হবে না।"

ইসরাইলের এই বর্বরতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১৮ মার্চ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আধিপত্য কমাতে নতুন কৌশল হাতে নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৫ মার্চ তিনি হঠাৎ করেই মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন। এরপরই রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের বিভিন্ন শহরে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। এতে অন্তত ৫৩ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ এজেন্সি।

তবে হুথি বিদ্রোহীরাও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। তারা লোহিত সাগরে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি ট্রুম্যান লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ১৭ মার্চ তাসলিম নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। ইয়েমেনে মার্কিন হামলাকে ‘অপরাধ ও আগ্রাসন’ আখ্যা দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, "ইরান তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসনের কঠোর জবাব দেবে।"

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, হুথি বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও রসদ দিয়ে সাহায্য করছে ইরান। তবে এই অভিযোগ নাকচ করে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, "ইয়েমেনের জনগণ ও তাদের সরকার স্বাধীনভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়। ফিলিস্তিনের পক্ষে হুথিদের অবস্থান ইয়েমেনের কৌশলগত সিদ্ধান্তেরই প্রতিফলন।"

এর আগে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও আঞ্চলিক তৎপরতা বন্ধ করতে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে একটি চিঠি পাঠান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। চিঠিতে হামাস, হিজবুল্লাহ ও হুথি বিদ্রোহীদের প্রতি ইরানের সমর্থন প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয় এবং বিনিময়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অপশাসনের’ কাছে মাথা নত না করার ঘোষণা দিয়েছেন খামেনি। তিনি বলেন, "ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ বলয় গঠন করা হবে।"

বিশ্লেষকদের মতে, হামাস ও হুথিদের লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলা অব্যাহত থাকলে ইরানও চুপ করে বসে থাকবে না। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’ নামে একটি পাল্টা সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে তেহরান। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ সংঘাত আরও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/lUMnMDQlwis?si=AZySFkmE1WRUSN-T

এম.কে.

×