ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

সিরিয়ায় বাশারপন্থীদের কঠিন পরিণতি

প্রকাশিত: ০০:০২, ১০ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০০:০৪, ১০ মার্চ ২০২৫

সিরিয়ায় বাশারপন্থীদের কঠিন পরিণতি

সিরিয়ায় আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। একসময় দেশটির শাসক থাকলেও, এখন পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে বাশার আল আসাদকে। গেল ডিসেম্বরে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামীর হাতে তার সরকারের পতন ঘটে। দীর্ঘ পাঁচ দশকের স্বৈরশাসনের অবসানের পর, নতুন শাসক আলশারা ঘোষণা দিয়েছেন যে, আসাদ সমর্থকদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। 


ইতোমধ্যে শতাধিক আসাদপন্থীকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিরিয়ায় নতুন করে সংঘাত বাড়ছে, যা দেশটির ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে এবং নতুন সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

সিরিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। আসাদপন্থী বাহিনী লুকিয়ে থেকে পুনরায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে, যার ফলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। গেল কয়েকদিনে আলশারার সরকারি বাহিনী ও আসাদ সমর্থিতদের মধ্যে ব্যাপক সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছে কয়েকশো মানুষ। সিরিয়ার বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং পালিয়ে থাকা আসাদ বাহিনীর মধ্যে এই সহিংসতাকে ডিসেম্বরে আসাদের পতনের পর সবচেয়ে বড় সংঘাত হিসেবে দেখছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।


লাটাকিয়া ও টারউসে আসাদপন্থীরা আকস্মিকভাবে আলশারার বাহিনীর ওপর হামলা চালালে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা কয়েকশোতে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আলশারার সরকার শিয়া অধ্যুষিত শিয়ার, মুক্তারিয়া, ও হাফার গ্রামের আসাদ সমর্থিত সংখ্যালঘু আলাউইট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযান পরিচালনা করেছে। এই সম্প্রদায় আসাদ সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল এবং তার শাসনামলে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখলে রেখেছিল।

 

সিরিয়ার সাম্প্রতিক সহিংসতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেছে। বহু বছর ধরে আসাদ সরকারের পক্ষে সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়া রাশিয়া বলছে, তারা শান্তি স্থাপন ও সংঘাত নিরসনে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত। তবে বিদ্রোহী নেতা এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলশারা রাশিয়ার ওপর খুব বেশি আস্থা রাখছেন না।


এদিকে, আসাদ সরকারের মিত্র ইরানও সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির সরকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, এই অস্থিরতা ইসরায়েলের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি, আলাউইট সম্প্রদায়ের ওপর আলশারার সরকারের আক্রমণ নিয়ে ইরান তাদের অসন্তোষ স্পষ্ট করেছে।

সিরিয়ায় নতুন সংঘাতের পরিস্থিতিতে তুরস্কও তৎপর হয়ে উঠেছে। প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সিরিয়ার অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে তুরস্ক সহজভাবে নেবে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিরিয়ার আসাদ সরকারের পতন এবং আলশারার ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে তুরস্ক অন্যতম প্রধান ভূমিকায় ছিল। বর্তমান পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেওয়া হবে, সেটিই এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির বড় প্রশ্ন।

সিরিয়ার পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। বাশার আল আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হলেও তার সমর্থকরা যে এখনো প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে, সেটাই প্রমাণ করছে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ। আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কারণ এই উত্তেজনা আরও বড় আকার ধারণ করলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

 

 

সুত্র:https://tinyurl.com/59v7sw75
 

আফরোজা

×