ইসরায়েলের বিমানঘাঁটি ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তর লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন।
গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রায় ১৮০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইসরায়েলের বিমানঘাঁটি ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তর লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। তবে এই হামলা চালিয়ে ‘ইরান বড় ভুল করেছে এবং এজন্য তাকে মূল্য দিতে হবে’বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এমনকি ইসরায়েলের সহযোগী দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রও পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে দেশটির প্রতি। এমন অবস্থায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলা কিংবা প্রতিশোধ কি রকম হবে তাই নিয়ে চলছে জল্পনা।
যদিও ইরানও হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, ইসরায়েল যদি পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে ইসরায়েলের সব অবকাঠামোর ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হবে।
এ বিষয়ে বিবিসির সিকিউরিটি করেসপন্ডেন্ট ফ্রাঙ্ক গার্ডনার লিখেছেন, ইরান গত এপ্রিলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক সহযোগীরা দেশটিকে যেভাবে ধৈর্য ধারণের আহবান জানিয়েছিলো এবার তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ইসরায়েলের এখনকার কৌশল হলো এক সাথে দু'ভাবে এগুনো: হত্যা, বিমান হামলা ও প্রতিরোধ- যার মাধ্যমে ইরান ও তার সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে বুঝিয়ে দেয়া যে ইসরায়েলে আঘাত করলে আরও বেশি শক্তির মুখোমুখি হতে হবে।
সাবেক ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা আভি মেলামেদ বলেছেন, “ইরানের হামলা হলো ইসরায়েলকে বড় ধরনের পাল্টা হামলার জন্য উস্কানি দেয়া। আমরা ইরানি লক্ষ্যবস্তু গুলোতে উল্লেখযোগ্য ও তাৎক্ষণিক ইসরায়েলি জবাব দেখতে পাবো।“
ইসরায়েলের প্রতিশোধ কেমন হতে পারে?
ইরানে হামলার জন্য দীর্ঘদিনের একটি পরিকল্পনা ইসরায়েলের হাতে থাকবে। এর প্রতিরক্ষা প্রধান এখন পর্যালোচনা করে দেখবেন কখন ও কীভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রটিতে আঘাত করবেন। এর মধ্যে অবশ্যম্ভাবী সামরিক লক্ষ্যবস্তু হবে স্থলভাগে যেখান থেকে মঙ্গলবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।
সুতরাং ফায়ারিং এর জন্য ক্ষেপণাস্ত্র যেখানে রাখা হয়েছে শুধু সেই জায়গা নয় বরং কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার, এমনকি রিফুয়েলিং সেন্টারগুলোও এর আওতায় থাকবে।
এমনকি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ দিয়েছে যারা এবং যারা এটি পরিচালিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে ইরানের অভ্যন্তরেই গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে পারে ইসরায়েল। আর যদি দেশটি আরও বেশি কিছু করতে চায় তাহলে তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে টার্গেট করতে পারে।
যে পথেই এগুক ইসরায়েল, এতেও ইরানের পাল্টা হামলা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে এবং এর মাধ্যমে দেশ দুটি হামলা ও প্রতিশোধে চিরস্থায়ী এক চক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়বে।
গত এপ্রিলে ইসরায়েল যেভাবে ইরানের হামলার জবাব দিয়েছিলো তার চেয়ে এবার আরও অনেক বেশি শক্তি নিয়ে আক্রমণ করতে পারে দেশটি।
ওই সময় ইসরায়েলি ভূখণ্ডে তিনশর মতো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন টার্গেট করে ছুঁড়েছিল ইরান। তার জবাবে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার কাছে ছোট কিন্তু প্রতীকী হামলা করেছিলো। এতে ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও ইরানকে তারা দেখিয়েছিল যে চাইলে তারা কোথায় পৌঁছাতে পারে।
তবে এবারের পরিস্থিতি হবে ভিন্ন। ইরান যেমন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ও হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ হত্যার জবাব দেওয়ার কথা ভাবছে, ইসরায়েলও তেমনি ইরানের সরাসরি আক্রমণ নিয়ে চুপ করে থাকবে না।
এমনকি ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা থেকে শুরু করে মঙ্গলবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যেখান থেকে হয়েছে কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রাখা ও যেখান থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে রিভল্যুশনারি গার্ডের ঘাঁটি পর্যন্ত।
সূত্র: বিবিসি বাংলা ও সিএনএন
তাসমিম