ছবি: CNN
গত বছর লেবার পার্টি এই বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল, কিন্তু সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর এখন সেই একই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে স্টারমারের সরকার!
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য মানবাধিকার সুরক্ষায় নিরাপত্তা দিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে চায়, এমন এক পদক্ষেপ যা কড়া সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্তে, কিছু মন্ত্রী এর বিরোধিতা করছেন, যা চাপ সৃষ্টি করছে স্টারমার সরকারের ওপর।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে ক্ষমতায় আসার পর, লেবার পার্টি আগের কনজারভেটিভ সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার পরিকল্পনা করছে। এসব নিষেধাজ্ঞার আওতায়, যেসব অভিবাসনপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্য থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছিলেন, তারা অনেক ক্ষেত্রেই নব্য দাসত্ব আইনের অধীনে নিরাপত্তা দাবি করতেন, যাতে তাদের নির্বাসন ঠেকানো যায়।
নতুন নিষেধাজ্ঞাটি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মানবাধিকার সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার সুযোগগুলো সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করছে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায়, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও ২৮ দিন পর্যন্ত আটক করে রাখা হবে, যা একদিকে মানবাধিকারের প্রতি চরম অবহেলা এবং অন্যদিকে অনেকগুলো সামাজিক প্রশ্নের উদ্রেক করছে।
প্রতিবছর হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী বিভিন্ন দেশে নির্যাতন, দারিদ্র্য বা যুদ্ধের কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে চেষ্টা করেন। তাদের অধিকাংশই ছোট ছোট নৌকায় করে আছেন, যা সমুদ্রের মাঝখানে বিপজ্জনকভাবে পাড়ি দেয়। তবে এই ধরনের অভিবাসন অনেক ব্রিটিশ ভোটারের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, কারণ এটি নৈতিক, আর্থিক এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বছরের নির্বাচনের সময় কিয়ার স্টারমার বলেছিলেন যে, তিনি মানব পাচারের সংগঠিত চক্রগুলোকে "ভেঙে দেবেন"। তবে এখন তার সরকারের এই পদক্ষেপগুলো কিছু প্রশ্ন তুলছে।
গত বৃহস্পতিবার, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে একটি নতুন বিল পেশ করা হয়, যার নাম ‘দ্য বর্ডার সিকিউরিটি, অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রেশন বিল’। এই বিল পাস হলে পুলিশ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মুঠোফোন জব্দ করে, এর মাধ্যমে তাদের মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ খুঁজে বের করবে। এর ফলে পুলিশ মানব পাচারকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হবে, যারা ছোট নৌকা বানিয়ে বা নৌকার জন্য যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে অবৈধভাবে মানুষকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসেন।
২০২৫ সালের শুরুতে এমন কী পরিবর্তন ঘটল, যা কিয়ার স্টারমারকে এই কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করল? এই প্রশ্নে তার অফিস বা তিনি নিজে কোনো মন্তব্য করেননি, তবে পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাজ্যে অভিবাসন বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুগুলোর একটি। ইউগভ (ব্রিটিশ মার্কেট রিসার্চ ও পোলিং প্রতিষ্ঠান) ,একটি জরিপ অনুযায়ী, স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি বাদ দিয়ে অভিবাসনই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ব্রিটিশ জনগণের কাছে। অর্থাৎ, নাগরিকরা এখন অভিবাসন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে গত বছর নৌকায় চেপে ৩৬,৮১৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। এই বৃদ্ধি প্রবল উদ্বেগ তৈরি করেছে, বিশেষ করে ব্রিটেনের সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অভিবাসন নীতি নিয়ে।
তবে এখন, ক্ষমতায় এসে, স্টারমারের সরকার তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, যদিও এই পদক্ষেপগুলি সমালোচনার মুখে পড়ছে। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিরাপত্তা অধিকার বাতিল এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের আটক রাখার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে স্টারমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
এখন এই পরিস্থিতির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যেমন—অভিবাসনসংক্রান্ত রাজনৈতিক চাপ, জনমত, এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ। তবে, স্টারমারের সরকারের এই পদক্ষেপের সাথে যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি কড়া প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
রেজা