ভ্রাম্যমাণ আশ্রয়কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করছেন রুশ কর্মকর্তারা
পরমাণু বোমা হামলা থেকে বাঁচতে ভ্রাম্যমাণ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছে রাশিয়া। পরমাণু বোমা হামলার পর যে শকওয়েভ ও তেজস্ক্রিয়তা তৈরি হয় তা থেকে সাময়িক সুরক্ষা দেবে এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো। এ ছাড়া প্রচলতি অন্যান্য অস্ত্রের হামলা থেকেও সুরক্ষা মিলবে এই আশ্রয়কেন্দ্রে। খবর আরটির।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় তিন বছরের মাথায় চলতি সপ্তাহে প্রথমবারের মতো ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি দিয়েছে বিদায়ী জো বাইডেন প্রশাসন। এর প্রেক্ষিতে রাশিয়ার যে পরমাণু অস্ত্রনীতি তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন নতুন নির্দেশনায় বলেছে, শক্তিধর কোনো দেশের সমর্থন নিয়ে রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলে পাল্টা জবাবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে মস্কো। এর ফলে পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা আরও প্রবল হয়েছে। রাশিয়া শুধু পরমাণু অস্ত্রনীতিই বদলায়নি, সেই সঙ্গে পরমাণু যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছে।
তারই অংশ হিসেবে পরমাণু হামলা থেকে সুরক্ষা দেয় এমন ভ্রাম্যমাণ আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি শুরু করেছে দেশটি। রাশিয়ার ইমার্জেন্সি মিনিস্ট্রির গবেষণা ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, যে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে সেগুলোর নাম ‘কেইউবি-এম’। এসব আশ্রয়কেন্দ্র পরমাণু বোমা হামলার পাশাপাশি অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয় থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সুরক্ষা দেবে। ‘কেইউবি-এম’ দেখতে জাহাজে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত কন্টেনারের মতো। এর দুটি মডিউল রয়েছে। এক একটি কক্ষে ৫৪ জন পর্যন্ত আশ্রয় নিতে পারবে। অন্যটি কারিগরি ব্লক হিসেবে ব্যবহারের জন্য। প্রয়োজনে এক একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আরও মডিউল যুক্ত করা যাবে। রাশিয়ার ইমার্জেন্সি মিনিস্ট্রির গবেষণা ইনস্টিটিউটটি বলেছে, ভ্রাম্যমাণ এসব আশ্রয়কেন্দ্র নানাবিধ কাজের উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে।
এগুলো লোকজনকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে। নাগরিকদের নিরাপত্তায় এটিকে একধাপ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেছে ইনস্টিটিউট। ইনস্টিটিউট আরও বলেছে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সহজেই ট্রাকে পরিবহনের উপযোগী এবং এতে পানি সরবরাহের সংযোগ দেওয়া সম্ভব। রাশিয়ার বিস্তীর্ণ বরফাচ্ছাদিত এলাকাতেও স্থাপন করা যাবে এসব আশ্রয়কেন্দ্র। এগুলো আরও যেসব পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে সেগুলো হলো-বিস্ফোরণ ও প্রচলিত অস্ত্রের আঘাত, ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য ও অগ্নিকা-ের প্রভাব। যদিও এমন আশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরুর সঙ্গে বর্তমান কোনো সংকটের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তবে এর সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালানোর যে অনুমতি তার সঙ্গে সংযোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাইডেন প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তকে বেপরোয়া অভিহিত করে ক্রেমলিন এরই মধ্যে বলেছে, যদি সত্যি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালানো হয়, তবে এর যথোপযুক্ত জবাব দেবে মস্কো। বাইডেনের অনুমতির পর যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে গত মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূখ-ে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের হাজারতম দিনে এ হামলা চালানো হয়। ইউক্রেন যুদ্ধ আরও সংঘাতের দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ।