ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১

বিপুল জয় পেতে পারে লেবার পার্টি

ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন আজ

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:০৪, ৪ জুলাই ২০২৪

ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন আজ

প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও লেবার পার্টি নেতা কিয়ার স্টারমার

ব্রিটেনে আজ সাধারণ নির্বাচন। ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটের পরবর্তী বাসিন্দা নির্ধারণে ভোট দিচ্ছেন দেশটির জনগণ। নির্বাচনে মূল লড়াই হবে বর্তমান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ বা টোরি ও লেবার পার্টির মধ্যে। ইতোমধ্যে প্রকাশিত কয়েকটি জনতম জরিপে আভাস পাওয়া গেছে, ৬১ বছর বয়সী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি নির্বাচনে বিপুল জয় পেতে যাচ্ছে। অপরদিকে ৪৪ বছর বয়সী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী।

নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অপেক্ষা করুন। আমরাই ফিরছি।’ দেড় মাসের টানা নির্বাচনী প্রচার শেষে আজ সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা ভোট হবে। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালের মধ্যেই সর্বশেষ ফল প্রকাশিত হবে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি, লেবার পার্টির পাশাপাশি লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, গ্রিন পার্টি, রিফর্ম পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টিসহ ছোট-বড় অন্তত ৯৮টি দল অংশ নিয়েছে। 
ব্রিটেশ হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের বিপরীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ এই নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী লড়ছেন। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে ২২ মে আকস্মিক আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন ঋষি সুনাক। যদিও ২ মে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনের পর লেবার পার্টি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। নির্বাচনে প্রধান দলগুলো জনমত নিজেদের দিকে টানতে চলমান সমস্যার সমাধানে ও সুসংহত যুক্তরাজ্য গড়ে তুলতে নির্বাচনী ইশতেহারে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও এএফপির। 
ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময় থেকে ব্রিটেনের ভঙ্গুর অর্থনীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অভিবাসন সমস্যাসহ সম্প্রতি  অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জনগণ বেশ বিরক্ত। টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা টোরি পার্টির নেতৃত্বের প্রতিও আস্থা রাখতে পারছে না সাধারণ মানুষ। এমন বাস্তবতায় পরিবর্তনের সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ঋষি সুনাক। বুধবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘লেবার পার্টির বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার কথা বলা হচ্ছে। তবে ক্ষমতায় আমরাই ফিরছি।

সহজে হাল ছাড়ছি না।’ ২০১০ সাল থেকে টানা তিনবার ক্ষমতায় আছে ঋষি সুনাকের দল। তবে বর্তমানে টোরি দলের অবস্থা নড়বড়ে। আর মে মাসে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যাপক বিজয়ের পর ফুরফুরে মেজাজে থাকা লেবার পার্টি জাতীয় নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। লেবার পার্টির পরিবর্তনের ডাকের সঙ্গে জনগণও যে পরিবর্তন চান, সেটির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে নির্বাচনী জনমত জরিপগুলোতে। সবশেষ জনমত জরিপে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে লেবাররা।
লেবার পার্টি থেকে ১৯ পয়েন্ট কম, তথা ২১ পয়েন্টে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ভালো ফলাফল করলেও নির্বাচনী জরিপে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে তারা। লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার বলে আসছেন, ক্ষমতায় গেলে অর্থনীতি পুনর্গঠন, স্বাস্থ্যসেবাকে গতিশীল করা, জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, স্কুলগুলোতে আরও শিক্ষক নিয়োগসহ অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডা না পাঠিয়ে নিজ নিজ দেশে পাঠাবেন।

স্টারমার কনজারভেটিভ পার্টির টানা ১৪ বছরের ‘বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি’ থেকে দেশকে পুনর্গঠনের জন্য ৪ জুলাই লেবার পার্টিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।  তবে এই নেতা বাংলাদেশ বিরোধী মন্তব্য করায় তার ওপর স্থানীয় বাঙালিরা বেশ নাখোশ। আবার গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতার পক্ষেও খানিকটা সাফাই গাওয়ায় মুসলিম সম্প্রদায়ও এই লেবার নেতার ওপর বিরক্ত।
নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও তাদের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সভা-সমাবেশ, লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। দলগুলোর শীর্ষ নেতার বিভিন্ন গণমাধ্যমের নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন বিভিন্ন প্রশ্নের।
২৭ জুন ডেইলি সানের এক বিতর্কে অংশ নিয়ে লেবার নেতা স্টারমার অবৈধ অভিবাসন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অযাচিতভাবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করেন। পরবর্তীকালে লেবার পার্টির ব্যাখ্যায়ও প্রশমিত হয়নি বাংলাদেশী কমিউনিটির ক্ষোভ। একটি ব্রিটিশ বাংলা গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্টারমার বাংলাদেশি কমিউনিটিকে আঘাত করা তার উদ্দেশ্য ছিল না বলে অনুতপ্ত হন।

৯ নারীসহ মোট ৩৪ জন ব্রিটিশ বাংলাদেশী এই নির্বাচনে লড়ছেন। এর মধ্যে বর্তমান এমপি রুশনারা আলী, রুপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক, আপসানা বেগমসহ লেবার পার্টি মনোনীত প্রার্থী রয়েছেন আটজন। তারা প্রত্যেকেই জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। লেবাররা সরকার গঠন করলে প্রথমবার মন্ত্রিসভায়ও স্থান পেতে পারেন কোনো কোনো বাংলাদেশী।  
১৯৯৭ সালে টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে লেবার পার্টি ৪১৮টি আসনে জয় পায়। তবে এবারের ফল আরও ভালো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

×