ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

যে কারণে ৫০ বছরের সুখী দম্পতি স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিলেন

প্রকাশিত: ১৪:২৭, ৩০ জুন ২০২৪

যে কারণে ৫০ বছরের সুখী দম্পতি স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিলেন

নেদারল্যান্ডসের জ্যান ও এলস দম্পতি

দীর্ঘ ৫০ বছর সুখে-দুঃখে একসঙ্গে থেকেছেন নেদারল্যান্ডসের জ্যান ও এলস দম্পতি। একসঙ্গে মৃত্যুকে বেছে নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছেন তাঁরা। গত ৩ জুন ‘ডুয়ো–ইউথেনেসিয়া’ বা স্বেচ্ছায় একসঙ্গে মৃত্যুকে বরণ করে নেন জ্যান ও এলস। এক প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

নেদারল্যান্ডসে স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ। আইন অনুযায়ী চিকিৎসকের সাহায্যে স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য আবেদন করা যায়। শারীরিক অথবা মানসিক যন্ত্রণা ‘অসহনীয় ও নিরাময় অযোগ্য’ বলে প্রমাণ পেলে স্বেচ্ছামৃত্যুতে সম্মতি দেন চিকিৎসকেরা। দম্পতি বা যুগলেরাও এভাবে স্বেচ্ছামৃত্যুর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন দেশটিতে।

জ্যান ও এলস দম্পতির স্বেচ্ছামৃত্যুর তিনদিন আগে নেদারল্যান্ডসের ফ্রাইসল্যান্ডে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন বিবিসির লিন্ডা প্রেসলি। এই দম্পতি জানান, তাঁরা পাঁচ দশক ধরে একসঙ্গে বসবাস করেছেন। তাদের বেশিরভাগ সময় কেটেছে নৌকায় বা ক্যাম্পরভ্যানে। ইট-পাথরের বাড়িতে থাকতে ভালো লাগত না বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। 

নৌকায় বসবাসের কারণে পরিবহণের ব্যবসায় নেমেছিলেন জ্যান। কিন্তু দীর্ঘদিন ভারী কাজ করার কারণে জ্যানের একটা সময় তীব্র পিঠে ব্যথার সৃষ্টি হয়। তাঁকে প্রতিদিন প্রচুর ওষুধ খেতে হতো। আর এলস করতেন শিক্ষকতা। কিন্তু এলসের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিলোপের সমস্যা দেখা দেয়।

পানি ও নৌকার প্রতি ভালোবাসা থেকেই বিয়ের পর থেকে হাউজবোটে বসবাস শুরু করেন জ্যান ও এলস। তবে একমাত্র ছেলের জন্মের সময় কিছুদিন ছিলেন বাড়িতে। পরবর্তীতে ছেলেকে বোডিং স্কুলে দিয়ে তাঁরা আবারো চলে যান হাউসবোটে। সপ্তাহে একদিন ছেলে এসে হাউজবোটে থাকত মা–বাবার সঙ্গে। ২০০৩ সালে অসুস্থতা ও পণ্য পরিবহণ ব্যবসা খুব একটা লাভজনক না হওয়ায় ক্যাম্পারভ্যান বা গাড়ির বাড়িতে বসবাস শুরু করেন জ্যান ও এলস।

২০০৩ সালে জ্যানের মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু তাতে অবস্থার উন্নতি হয়নি। এলস তখন শিক্ষকতা করতেন। তাঁরা মাঝেমধ্যে স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে কথা বলতেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডসের স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার সংস্থা ‘রাইট টু ডাই’ অর্গানাইজেশনে যোগ দেন এই দম্পতি।

২০১৮ সালে এলস অবসরে যান। তাঁর মধ্যে ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। ২০২২ সালের নভেম্বরে চিকিৎসকের পরীক্ষার ফলাফলে এলসের ডিমেনশিয়া শনাক্ত হয়। এলস যখন জানতে পারলেন, চিকিৎসায় তাঁর অবস্থার আর উন্নতি হবে না। তখন তিনি ও জ্যান তাঁদের ছেলের সঙ্গে স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে কথা বলা শুরু করেন।

স্বেচ্ছামৃত্যুর কারণ হিসেবে জ্যান বলেন, ‘আমরা জীবন উপভোগ করেছি। রোগের এই যন্ত্রণা আর সহ্য করতে চাই না। প্রতিদিন এত এত ওষুধ খেতে হয়। এখন আমাদের থেমে যাওয়ার সময়।’

জ্যান ও এলসের স্বেচ্ছামৃত্যুর দিন নির্ধারিত হয় গত ৩ জুন। এর আগের দিন দুজন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান। ৩ জুন সকালে স্থানীয় একটি হাসপাতালে যান সবাই। এই দম্পতির বন্ধু এবং পরিবারের লোকজনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দুই ঘণ্টা তাঁরা একসঙ্গে সময় কাটান। এরপর চিকিৎসকেরা জ্যান ও এলসকে নিয়ে যান। রুটিন অনুযায়ী সব কিছু সম্পন্ন করেন চিকিৎসকেরা।

বারাত

×