ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

বন্ধ আকাশসীমা, প্রস্তুত মিসাইল, যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ভারত-পাকিস্তান?

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

বন্ধ আকাশসীমা, প্রস্তুত মিসাইল, যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ভারত-পাকিস্তান?

ছবি: সংগৃহীত

চরম উত্তেজনার মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। দুই দেশের সীমান্তে ব্যাপক হারে সেনা, ট্যাংক, যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়ন করা হয়েছে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনী একটি মিসাইল ধ্বংসের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে, যা তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এদিকে, ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির এক বৈঠকে ঘোষণা করা হয়েছে—ভারতের সঙ্গে সব ধরনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বন্ধ থাকবে এবং পাকিস্তানের আকাশসীমা ভারতের জন্য নিষিদ্ধ করা হবে। যদিও শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ ছাড় দেয়া হবে।

পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারতীয় নাগরিকদের দেয়া সব ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং পাকিস্তানে অবস্থানরত ভারতীয়দের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনে কর্মরত প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করে দ্রুত পাকিস্তান ছাড়তে বলা হয়েছে। পাশাপাশি হাই কমিশনের কর্মকর্তা সংখ্যা ৩০-এ নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যা সম্পন্ন করতে হবে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে।

নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সীমান্তে উভয় পক্ষই সেনা মোতায়ন জোরদার করেছে। পাকিস্তান বিমান বাহিনী সীমান্তবর্তী ঘাঁটিগুলোতে নজরদারি ও আক্রমণাত্মক ড্রোন মোতায়ন করেছে। বিশেষ করে লাহোরের মুরিদ ঘাঁটিতে তুরস্ক থেকে কেনা বাইরাক্তার টিবি-২ ড্রোন মোতায়ন করা হয়েছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট "ফ্লাইট রাডার ২৪" থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট অনুযায়ী, করাচি বিমানঘাঁটি থেকে একাধিক যুদ্ধবিমান লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডি ঘাঁটিতে মোতায়ন করা হয়েছে। এসব বিমান রসদ ও সেনা সরঞ্জাম বহন করেছে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি জাহাজ আইএনএস সুরাত থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠ ঘেঁষে ছুটে আসা একটি মিসাইল সফলভাবে ধ্বংস করে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, এটি দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় এক বড় সাফল্য।

পাকিস্তানও এই সময়ে করাচি উপকূলে সারফেস-টু-সারফেস মিসাইলের পরীক্ষা চালাচ্ছিল বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

কাশ্মীরের পহেলগামে নিরীহ পর্যটকদের হত্যার ঘটনা এই উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারে এক জনসভায় বলেন, “এই হামলার জন্য যারা দায়ী, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। প্রয়োজনে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত থেকেও খুঁজে এনে সাজা দেয়া হবে।”

কাশ্মীরজুড়ে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে দেড় হাজারের বেশি লোককে আটক করেছে। এক অভিযানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ হন সেনার হাবিলদার ঝন্টু আলী শেখ।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক সৈয়দ মোহাম্মদ আলী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ভারত এবার বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে, যা ২০১৯ সালের থেকেও বড় হতে পারে। তিনি আরও বলেন, এটি আন্তর্জাতিক কৌশলের অংশ হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।

এদিকে কাশ্মীর হামলার পর কংগ্রেসের এক জরুরি বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীসহ শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। তারা হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, পহেলগামের মতো নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকায় হামলা কীভাবে হলো, তা তদন্ত হওয়া জরুরি। কংগ্রেসও এই হামলার জন্য পাকিস্তানকেই দায়ী করছে।

বর্তমান পরিস্থিতি দেখে বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তে সেনা মোতায়ন, আকাশসীমা বন্ধ, কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস এবং পাল্টা সামরিক প্রদর্শন— সব কিছুই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উদ্বেগজনকভাবে বাড়িয়ে তুলছে।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/M-9mP5oRDVU?si=Xmx_BiRFMugzcNJL

এম.কে.

×