ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

খাবার পানিশূন্য হতে পারে গাজা

ইসরাইলি হামলায় আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রকাশিত: ২২:১১, ৯ এপ্রিল ২০২৫

খাবার পানিশূন্য হতে পারে গাজা

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত এক ব্যক্তির লাশ নিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা

ফিলিস্তিনের গাজার ৭০ শতাংশ পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিচ্ছে। যার ফলে ফিলিস্তিনি উপত্যকায় মোট পানি সরবরাহের ৭০ শতাংশ কার্যকরভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইসরাইলি কোম্পানি মেকোরোট গাজায় সিংহভাগ পানি সরবরাহ করে।

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থার মধ্যস্থতায় কোম্পানিটি খাবার পানি সরবরাহ করে আসছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী মেকোরোটে পাইপলাইনে হস্তক্ষেপ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে ফিলিস্তিনের গাজার বিভিন্ন এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনী মুহুর্মুহু হামলা চালিয়েছে। এতে আরও ৫৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময় আহত হয়েছেন শতাধিক। তাদের অনেককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। খবর আলজাজিরার।
গাজা পৌরসভার মুখপাত্র হোসনি মেহান্না বলেন, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে পূর্ব গাজা শহরের শুজাইয়া পাড়ায় অবস্থিত মূল পাইপলাইনে পানি নেই। ফলে সেখান থেকে সাব-সরবরাহ চ্যানেল অকেজো। কোথাও সামান্য সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। সেখান থেকে পানি সংগ্রহে মরিয়া গাজাবাসী। ফলে পুরো পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মেহান্না বলেন, যদি মেকোরোট থেকে পানি প্রবাহ শীঘ্রই পুনরুদ্ধার না করা হয় তাহলে গাজা একটি পূর্ণাঙ্গ পানি সংকটের মুখোমুখি হবে। শুজাইয়া পাড়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ইসরাইলি বাহিনী সামরিক হামলা চালাচ্ছে। পানি সরবরাহ বিঘেœর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্ত করছি।

এলাকায় ইসরাইলি বাহিনীর ভারি বোমাবর্ষণের কারণে পাইপলাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না তা আগে যাচাই করছি। তিনি আরও বলেন, এই স্থগিতাদেশ সরাসরি সামরিক কার্যকলাপের কারণে হতে পারে অথবা ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাকৃত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে হতে পারে। বছরের পর বছর ধরে অবরোধ, অবকাঠামোগত ধস এবং ভূগর্ভস্থ পানি দূষণের কারণে গাজা উপত্যকা ইতোমধ্যেই বিশুদ্ধ পানির দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতিতে ভুগছে।

মানবিক পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকায় এখন ব্যাপক পানিশূন্যতার ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলা গাজায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৫০,৮১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১৫,৬৮৮ জন আহত হয়েছে। অপরদিকে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের হিসাবে নিহতের সংখ্যাটি ৬১,৭০০ জনেরও বেশি। তাদের দাবি হলো- ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষকে মৃত বলে ধরে নিয়ে ওই তালিকা করা হয়েছে। তাদের মরদেহ উদ্ধার সম্ভব না হওয়ায় প্রকৃত নিহতের সংখ্যা জানা সম্ভব নয়। 
এদিকে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো বলেছেন, গাজায় যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দিতে তার দেশ প্রস্তুত। বুধবার মধ্যপ্রাচ্য ও তুরস্ক সফরে রওনা হওয়ার আগে তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ে গাজার প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দেওয়া হতে পারে। আহত, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং অনাথদের অস্থায়ীভাবে ইন্দোনেশিয়ায় এনে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন- আমরা আহতদের, মানসিকভাবে বিপর্যস্তদের এবং অনাথদের সরিয়ে আনতে প্রস্তুত। তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে এবং গাজায় ফেরার মতো নিরাপদ পরিস্থিতি তৈরি হলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তিনি জানান, কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের ইন্দোনেশিয়ায় সরিয়ে নেওয়া যায় তা নিয়ে ফিলিস্তিনি ও অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করার জন্য তিনি তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ নয়, তবে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান থেকেই ইন্দোনেশিয়া সংঘাত নিরসনে তার ভূমিকা বাড়াতে চায়।

আরো পড়ুন  

×