
কাঠমান্ডতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিক্ষোভকারীরা
রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে নেপাল। শনিবার রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে জড়ো হন হাজারো বাসিন্দা। একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হলে এ ঘটনায় নিহত হন ২ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। খবর রয়টার্সের।
এদিন পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়ে, ‘রাজা ও দেশ’ জীবনের থেকেও প্রিয় বলে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের হঠাতে লাঠি চার্জের পাশাপাশি জল কামান ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। পুলিশের দাবি, নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়ায় কঠোর পদক্ষেপ হাতে নেন তারা। আটক করা হয় কয়েকজনকে।
সহিংসতা রোধে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, বিক্ষোভের এক পর্যায়ে একটি বাড়ি ও কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা। এতে এক সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন হতাহতের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে বলেন, দেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন, মানুষের ভালো চাকরি, শান্তি ও সুশাসন পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি শুধু খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
তারা বলছেন, দেশের অস্তিত্ব এখন ম্লান। খুব দ্রুত একজন রাজা দরকার। তা না হলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে প্রজাতন্ত্র আমাদের দেশটিকে ধুলোয় মিশিয়ে দেবে। এদিকে রাজধানীর অন্য স্থানে প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষা করতে হাজারো মানুষ জড়ো করে রাজনৈতিক দলগুলো। সাবেক নেতা ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহল বলেন, নেপালিরা অতীতে ফিরে যাবে না। ২০০৮ সালে পার্লামেন্টে রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর নেপালে ফেডারেল ও রিপাবলিকান শাসন ব্যবস্থা চালু হয়।
কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধীরগতির কারণে রাজতন্ত্র ও হিন্দু রাষ্ট্রধর্ম ফিরিয়ে আনার দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই দাবি আসলে বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় জনগণের হতাশারই প্রতিফলন। তবে প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন তারা।
কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নিষিদ্ধ এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতে কারফিউ জারি করা হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পুলিশের মুখপাত্র দিনেশ কুমার আচার্য বলেন, নিহতদের মধ্যে একজন বিক্ষোভকারী ও একজন সাংবাদিক রয়েছেন। নেপালের এভিনিউজ টিভি জানিয়েছে, তাদের একজন সাংবাদিক একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
নেপাল পুলিশের আরেক মুখপাত্র শেখর খানাল জানান, বিক্ষোভকারীরা একটি ব্যক্তিগত বাড়ি ও একটি গাড়িতে আগুন দেয়। সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৭ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তিন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। এদিন নেপালে রাজতন্ত্রবিরোধী একটি সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়েছে, তবে তা শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়। নেপালে ২০০৮ সালে বিশেষভাবে নির্বাচিত একটি পরিষদ ২৩৯ বছরের পুরোনো রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে।