ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১

ভূমিকম্পের শক্তি ছিল ৩৩৪ পরমাণু বোমার সমান

মিয়ানমারে মৃত্যু ১৬শ’ ছাড়াল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:২৪, ৩০ মার্চ ২০২৫

মিয়ানমারে মৃত্যু ১৬শ’ ছাড়াল

মিয়ানমারে ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে

স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা শনিবার ১ হাজার ৬০০ ছাড়িয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার উদ্ধার তৎপরতা শুরুর পর রাজধানী নেপিদো, মান্দালয়, সাগাইংসহ বিভিন্ন শহর-গ্রামের ধ্বংসস্তূপ থেকে এ পর্যন্ত ১৬শ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ২ হাজার ৩৭৬ জনকে।

এছাড়া ৩০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। মিয়ানমারে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে তার বিধ্বংসী শক্তি ছিল ৩৩৪টি পরমাণু বোমার সমান। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ববিদ জেস ফনিক্স সিএনএনকে জানিয়েছেন এ তথ্য। সিএনএনকে ফনিক্স বলেন, মিয়ানমারের ভূমিকম্প যে পরিমাণ শক্তি নির্গত করেছে, তা ৩৩৪টি পরমাণু বোমার সমান। আগামী আরও অন্তত দু’মাস মিয়ানমার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকবে বলে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন এই ভূতত্ত্ববিদ। খবর বিবিসির।
তিনি বলেছেন, ইন্ডিয়ান টেকটোনিক প্লেট এবং ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের ওপর মিয়ানমারের অবস্থান। এ দুটি প্লেটের স্থানান্তরের কারণেই ভূমিকম্প হয়েছে। এই স্থানান্তর আরও দুই মাস পর্যন্ত চলবে। এ কারণে আগামী দু’মাস ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকবে মিয়ানমার। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে।

দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শহর মান্দালয় থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্র বা এপিসেন্টার। ইউএসজিএস জানিয়েছে,  মিয়ানমারে ৭.৭ এবং ৬.৪ মাত্রার দুটি ভূমিকম্প হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপ থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ২ হাজার ৩৭৬ জনকে।

এছাড়া ৩০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ব্যাপক এই ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়েছে মিয়ানমারের প্রতিবেশী থাইল্যান্ড, দক্ষিণ-পশ্চিম চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশেও।  এই ৭ দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে থাইল্যান্ডের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। রাজধানী ব্যাঙ্ককে কয়েকটি বহুতল ভবন ধসে পড়ায় এখনো নিখোঁজ আছেন শতাধিক মানুষ। এছাড়া দেশটিতে এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ১০ জনের দেহ। এরা সবাই ভূমিকম্পে ভবন ধসে মারা গেছেন।

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেইপিদো, সাগাইং, মান্দালয়, ম্যাগওয়ে, বাগো ও পূর্ব শানÑ এই ছয় প্রদেশ ও অঞ্চলে ইতোমধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে সামরিক সরকার। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শক্তিশালী কম্পনে নেইপিদো, সাগাইং, মান্দালয়সহ পাঁচটি শহরে ভবন ধসে পড়েছে। এ ছাড়া একটি সেতু ও একটি রেলসেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ইরাবতি নদীর ওপর আভা সেতু ধসে পড়েছে।

সেতুটি ভেঙে পানির মধ্যে হেলে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে সব দেশকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মিয়ানমারের এ আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় শোক প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের জনগণের পাশে দাঁড়াতে এরই মধ্যে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দল কার্যক্রম শুরু করেছে। মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)।

ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন, বাঁচার জন্য সেখান থেকেই কাঁদছেন তারা। কিন্তু তাদের উদ্ধার করতে কোনো ভারি যন্ত্রপাতি আসেনি। এজন্য খালি হাতেই চলছে উদ্ধারের চেষ্টা। যদিও এর মাধ্যমে সবাইকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়।

হেতেত মিন নামে ২৫ বছর বয়সী এক যুবক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পর তার ওপর একটি দেওয়াল ভেঙে পড়ে। এতে তার অর্ধেক শরীর চাপা পড়ে যায়। তবে তিনি বেঁচে যান। কিন্তু ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে তার দাদি ও দুই চাচা। তিনি হাত দিয়েই ধ্বংসস্তূপ সরানোর চেষ্টা করেন।

×