ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১

গাজার অর্থনীতি ॥ জাতিসংঘ প্রতিবেদন

আগের অবস্থায় ফিরতে লাগবে ৩৫০ বছর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:১০, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

আগের অবস্থায় ফিরতে লাগবে ৩৫০ বছর

ইসরাইলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা উপত্যকা

ছোট্ট ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এসব হামলা ও হত্যাকা-ে গাজার ‘অর্থনীতি পুরোপুরি বিধ্বস্ত’ হয়েছে। উপত্যকার অর্থনীতি যুদ্ধপূর্বাবস্থায় ফিরতে লাগবে ৩৫০ বছর। বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। এই যুদ্ধে গাজার অর্থনৈতিক ক্ষতি বিষয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন শাখা (আঙ্কটাড)। জাতিসংঘ বলেছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার জের ধরে গাজায় দেশটির শুরু করা যুদ্ধে উপত্যকাটির অর্থনীতি ও অবকাঠামো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গত মাসে ওই প্রতিবেদন পেশ করা হয়। এতে বলা হয়, যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই গাজার অর্থনৈতিক কর্মকা- ছিল দুর্বল। সেখানে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও পানির তীব্র ঘাটতি এবং উল্লেখযোগ্যভাবে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধতার মধ্যে ন্যূনতম মানবিক স্বাস্থ্য ও খাদ্যসহায়তা চলমান ছিল। এর বাইরে এ উপত্যকার অর্থনৈতিক কর্মকা- পুরোদমে ভেঙে পড়েছে। খবর আলজাজিরা ও বিবিসি অনলাইনের। 
জাতিসংঘ বলেছে, চলতি বছরের প্রথম চতুর্থাংশে (জানুয়ারি-মার্চ মাস) গাজার ৯৬ শতাংশ নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে, কৃষি উৎপাদন নেমে গেছে ৯৩ শতাংশ, সামগ্রিক উৎপাদন কমেছে ৯২ শতাংশ, সেবা খাতের উৎপাদন কমেছে ৭৬ শতাংশ। এ ছাড়া বেকারত্বের হার পৌঁছেছে ৮১ দশমিক ৭ শতাংশে। ইসরাইলের সামরিক অভিযান চলতে থাকায় গাজার এ পরিস্থিতি এখনো বিদ্যমান আছে কিংবা আরও খারাপ হয়েছে বলে মনে করে জাতিসংঘ। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের ব্যাপক সেনা অভিযানে গাজায় নজিরবিহীন মানবিক, পরিবেশগত ও সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

উপত্যকাটির অর্থনীতি প্রাক-উন্নয়ন অবস্থা থেকে একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থায় উপনীত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার পর যদি গাজা ২০০৭-২০২২ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারায় চলতে শুরু করে, সে ক্ষেত্রেও ২০২২ সালপূর্ব (যুদ্ধ-পূর্ব) জিডিপি পুনরুদ্ধার করতে উপত্যকাটির বাসিন্দাদের লাগবে ৩৫০ বছর।
এদিকে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে দুই কা-ারিকে হারিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাস। ফলে এবার তারা প্রধান নির্বাচনের বিষয়ে নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। চেইন অব কমান্ডে পরিবর্তন আনছে হামাস। ফলে তারা আপাতত কোনো নতুন প্রধান নির্বাচন করছে না। এক্ষেত্রে কৌশলী হয়েছে সংগঠনটি। হামাসের একাধিক উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের শাহাদাতের পর আমরা হামাসের চেইন অব কমান্ড নিয়ে নতুন চিন্তা করছি।

কাতারে হামাসের যেসব শীর্ষ নেতারা রয়েছেন তাদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আপাতত এ গোষ্ঠীটিই দলের নীতিনির্ধারণী সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে। সূত্রটি জানিয়েছে, যাবতীয় শর্ত অনুকূলে থাকলে আগামী মার্চে অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা প্রধান নেতা বেছে নেব। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে তা আরও পেছাতে পারে। তবে নির্বাচনের আগে ৫ সদস্যের কমিটিই দলের নির্বাহী দায়িত্বে থাকবে। গত আগস্টে হামাসের পলিটব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হন। তার মৃত্যুর পর শীর্ষ ৫ নেতার সমন্বয়ে দলের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

এ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে প্রধান নির্বাচন করা হয়। কমিটির সব সদস্য কাতারে বসবাস করছেন। ৩১ জুলাই ইরানে সাবেক প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হন। এরপর গত ৭ আগস্ট নতুন প্রধান হন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। তিনি এর আগে হামাসের গাজার প্রধান ছিলেন। সম্প্রতি ইসরাইলি হামলায় তিনিও নিহত হয়েছেন। হামাসের এ কমিটিতে থাকা পাঁচ নেতার চারজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- খলিল আল হায়া, খালেদ মেশাল, মোহাম্মদ দারউইশ এবং জাহের জাবারিন। তাদের মধ্যে গাজা ও পশ্চিম তীরের প্রতিনিধি হলেন খলিল আল হায়া ও জাহের জাবারিন। এ ছাড়া খালেদ মিশাল হামাসের শীর্ষ নেতা ও দক্ষ লিয়াজোঁ কর্মকর্তা।

মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য মিত্র দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও লিয়াজোঁর বিষয়ে তিনি দেখভাল করেন। এ ছাড়া অপর নেতা মোহাম্মদ দারউইশ গোষ্ঠীটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম শূরা কাউন্সিলের সদস্য। সবশেষ হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার পর বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা চলছিল। এমনকি প্রধান হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তির নামও আলোচনায় ছিল। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সবশেষ গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

×