ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১

লেবাননে ইসরাইলের সিরিজ বোমা হামলা

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:০১, ৬ অক্টোবর ২০২৪

লেবাননে ইসরাইলের সিরিজ বোমা হামলা

লেবাননে ইসরাইলের সিরিজ বোমা হামলা

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাংশে শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত একটানা ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। লেবাননের এক সরকারি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর হামলা কোথাও কোথাও ছিল ‘খুবই নৃশংস’। লেবানন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, যে হামলাগুলো সবচেয়ে তীব্র ছিল তার মধ্যে একটিতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বোমাবর্ষণ চলেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দে পুরো শহর বারবার কেঁপে ওঠে, বেশ কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বিস্ফোরণের লাল-সাদা ঝলকানি দেখা যায়। লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইসরাইলি শত্রু যুদ্ধবিমান থেকে বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলিগুলোতে চারটি খুবই নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। এরমধ্যে একটি হামলা হয়েছে চুয়েফাত এলাকায়।

হামলার পর ওই এলাকায় কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স যেতে দেখা গেছে।’ এএফপির ভিডিও ফুটেজে যেসব এলাকায় হামলা হয়েছে, সেখান থেকে কালো ধোঁয়ার কু-লী উঠতে দেখা গেছে। বৈরুতের দক্ষিণে একটি এলাকা থেকে আগুনের বিশাল একটি বল আকাশের দিকে উঠে যেতে দেখা গেছে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সেখান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া বের হয়েছে। টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ‘বর্তমানে বৈরুতের এলাকায় সন্ত্রাসী সংগঠন হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে’।

এর আগে শনিবার রাতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলির বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছিল। স্যাটেলাইটের ছবিতে বার্জ আল-বারাজনেহ, হারেত হারিক ও চুয়েফাত আল-আমরুসিয়ায় সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হওয়ার ছবি ফুটে উঠেছে। এদিকে লেবাননে স্থল অভিযান শুরুর পর ছয় দিনে ৪৪০ হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইল। শনিবার ইসরাইলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা বাহিনী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখবে। লক্ষ্যপূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত অভিযানে কোনো বিরাম আসবে না, হিজবুল্লাহকেও কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে লেবাননজুড়ে ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলায় কমপক্ষে আরও ২৩ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৯৩ জন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ লেবানন, নাবাতিয়েহ, বেকা, বালবেক-হারমেল, মাউন্ট লেবানন এবং উত্তরাঞ্চলে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। খবর আল-জাজিরার।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন শহর এবং গ্রামে এবং লেবাননের অন্যান্য অংশে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় ২৩ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৯৩ জন। এদিকে লেবানিজ সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ তাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা হাশেম সাফী উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না বলে জানিয়েছে। গত শুক্রবার ইসরাইলি বিমান হামলার পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র। হাশেম সাফী উদ্দীন হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।

তাকে সম্প্রতি নিহত হাসান নাসরাল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। আল-জাজিরা জানিয়েছে, হাশেম সাফী উদ্দীন হিজবুল্লাহর একজন অতি গোপনীয় নেতা হিসেবে পরিচিত। অনেকেই বিশ্বাস করতেন, তিনি নাসরাল্লাহর স্থলাভিষিক্ত হবেন। কিন্তু শুক্রবার সকালে বৈরুতের দাহিয়েহ এলাকায় ইসরাইলি হামলার পর থেকে তার কোনো খবর না পাওয়ায় হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
৪৪০ হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে হত্যার দাবি ইসরাইলের ॥ লেবাননে স্থল অভিযান শুরুর পর ছয়দিনে ৪৪০ হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইল। শনিবার ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর টাইমস অব ইসরাইলের। ইসরাইলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা বাহিনী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখবে। লক্ষ্যপূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত অভিযানে কোনো বিরাম আসবে না, হিজবুল্লাহকেও কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।
একই দিন সংবাদ সম্মেলনে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘আমরা হিজবুল্লাহ’র সন্ত্রাসীদের লেবাননের উত্তর দিকে ঠেলছি। সন্ত্রাসীদের একটি অংশ এলাকা থেকে পালিয়েছে, বাকিরা আমাদের সেনা সদস্যদের কাছে পরাজিত ও নিহত হয়েছে।’ গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সংঘাত চলছিল। তবে গত ২৩ সেপ্টেম্বর লেবাননে বড় আকারে বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। এতে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডার নিহত হন।

এরপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় ইসরাইলি বাহিনী। অন্যদিকে  ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গাজায় যুদ্ধ বিরতির পাশাপাশি ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। গাজায় যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়ে আবার দিনশেষে ইসরাইলকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা দেশের দ্বিমুখীতার নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। ম্যাক্রোঁর বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে নেতানিয়াহু বলেছেন, অস্ত্র সরবরাহে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানানো দেশের সাহায্য ছাড়াই ইসরাইল জয়ী হবে।

×