ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১

দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসে ১৫ আগস্ট শোক দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল

প্রকাশিত: ২১:২৫, ১২ আগস্ট ২০২৪

দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসে ১৫ আগস্ট শোক দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল

দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাস

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেদিন আততায়ীরা নির্মমভাবে সপরিবার হত্যা করেছিল, সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্মরণে প্রতি বছর ওই তারিখে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাস ও মিশনে ‘জাতীয় শোক দিবস’ পালন করা হয়ে থাকে। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনও এর কোনো ব্যতিক্রম নয়। গত বছর পর্যন্তও সসম্মানে ও যথোচিত মর্যাদায় এই কর্মসূচি সেখানে পালিত হয়ে এসেছে।

চলতি বছরেও যথারীতি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। গত ২ আগস্ট (শুক্রবার) বর্তমান হাইকমিশনার মহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমানের তরফে তার কার্যালয় থেকে দিল্লিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাবেক কূটনীতিবিদ ও সেনা কর্মকর্তা, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও অন্যান্য অতিথিদের এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণপত্রও পাঠানো হয়েছিল।

ওই চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু: বিশ্ব শান্তি ও মানবতার এক মূর্ত প্রতীক’ – এই শীর্ষক আলোচনা সভা হবে দূতাবাসে। ১৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এর আয়োজন করা হয়। সেখানে যোগ দিতে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

এই চিঠি পাঠানোর ঠিক তিন দিনের মাথায় (৫ আগস্ট) বাংলাদেশের ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয় বঙ্গবন্ধুকন্যা তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি সে দিনই দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন। এরপর ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বঙ্গবন্ধুর মূর্তিতে ভাঙচুর ও হামলা চালানো হয়, ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাদুঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়, আক্রান্ত হন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। পরে গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে। 

এদিকে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ঠিক পরদিনই (৬ আগস্ট) দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে অতিথিদের আবারও চিঠি ও ইমেইল পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘অনিবার্য কারণবশত’ ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানসূচি ‘স্থগিত’ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে কাগজে-কলমে অনুষ্ঠান ‘স্থগিত’ করার কথা বলা হলেও অনুষ্ঠানের কোনও নতুন তারিখ জানানো হয়নি। বাংলা ট্রিবিউনকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই অনুষ্ঠান ও আলোচনাসভা ‘এক রকম বাতিলই হয়ে গেছে ধরে নেওয়া যায়’। শুধু দিল্লির হাইকমিশনেই নয়, কলকাতাসহ ভারতে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনে আগামী ১৫ আগস্ট যে সব অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা ছিল তার সব প্রস্তুতিই থেমে গেছে বা সেগুলো বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। 

এই অনুষ্ঠান বাতিল করার সিদ্ধান্ত যখন অতিথিদের জানানো হয়, তখনও ঢাকায় নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণই করেনি। ফলে এই সিদ্ধান্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিয়েছেন, না কি সেনাবাহিনীর ইশারায় এটা করা হয়েছে- না কি হাইকমিশন নিজে থেকেই পরিস্থিতি বিচার করে অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছে সে বিষয়টি খুব একটা স্পষ্ট নয়। দূতাবাসের কর্মকর্তারাও কেউ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না সহজবোধ্য কারণেই।

হাইকমিশনের আর একটি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল করাই শুধু নয়- দূতাবাসের বিভিন্ন কক্ষ বা হল থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি বা প্রতিকৃতিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার বিদায়ের পর তার ছবি সরানো হবে এটা প্রত্যাশিত হলেও জাতির জনক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ছবি দূতাবাসে থাকবে বলেই প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি।

এদিকে ঢাকায় সরকারর অন্যতম প্রধান কার্যালয়ে সচিবালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বেশিরভাগ উপদেষ্টার রুমে বঙ্গবন্ধুর ছবি শোভা পাচ্ছে। এছাড়া সোমবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিলের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

 

এম হাসান

×