ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১

নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতা

প্রকাশিত: ২২:১৩, ৫ জুলাই ২০২৪

নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতা

.

হিমালয় কন্যা নেপালে চরম রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির দল কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সংযুক্ত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) বা সিপিএন-ইউএমএল জোট বদল করে নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোর ফলে সে দেশে মাওবাদী নেতা পুষ্প কমল দাহাল ওরফে প্রচন্ড সরকারের পতন এখন সময়ের অপেক্ষা। সিপিএন ইউএমএলের সমর্থন নিয়েই এতদিন সরকার চালাচ্ছিলেন মাওবাদী পার্টির নেতা দাহাল। খবর বিবিসি অনলাইনের। কিন্তু এখন ওলির দল সেই সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়ে নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে নতুন জোট গড়ার ঘোষণা দিয়েছে। সিপিএন ইউএমএলের উপমহাসচিব দেশটির প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ ঝাবালি নতুন জোট গড়ার কারণ হিসাবে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী গত এক মাস ধরেই নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে জাতীয় স্তরের একটি জোট গড়ার জন্য আলোচনা চালাচ্ছিলেন। অবিশ্বাসের পরিবেশটা সেখান থেকেই তৈরি হয়। নেপালি কংগ্রেস যখন প্রচ- প্রস্তাব খারিজ করে দেয়, তারপরে আমরা নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা শুরু করি। নেপালের ২৭৫ আসনেরপ্রতিনিধি সভাবা পার্লামেন্টে মি. দাহালের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী সেন্টার) দলটির মাত্র ৩২ সদস্য আছেন।

অন্যদিকে কে পি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সিপিএন ইউএমএল দলটির হাতে আছে ৭৮টি আসন। দাহালের মাওবাদী পার্টি নেপালি কংগ্রেস ২০২২ সালের সাধারণ নির্বাচনের জোটবেঁধে লড়াই করেছিল। সেই ভোটে নেপালি কংগ্রেস ৮৯টি আসনে জিতে একক সর্ববৃহৎ দল হয়েছিল। এখন নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে ওলির সিপিএন ইউএমএল জোট গড়ায় দাহালের সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। তার পদত্যাগ এখন সময়ের অপেক্ষা। ওলির দলের যে আট মন্ত্রী আছেন দাহালের ক্যাবিনেটে, তাদের সবাইকে পদত্যাগ করতে ইতোমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সরকার গড়ার জন্য নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএন ইউএমএলের সমঝোতা অনুযায়ী প্রথমে ওলি প্রধানমন্ত্রী হবেন আর পরের পর্যায়ে নেপালি কংগ্রেসের শের বাহাদুর দেউবা বসবেন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে।

নেপালের সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের চিঠি যেদিন সচিবালয়ে জমা দেবে সিপিএন ইউএমএল, সেদিন থেকে এক মাসের মধ্যে নতুন সরকার গড়তে হবে। যদিও বাস্তব পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে আরও আগেই নতুন সরকার গড়া সম্পূর্ণ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার জন্য দাহালকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে। তবে দাহাল পদত্যাগ না করে পার্লামেন্টে আস্থাভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আস্থা ভোট নেওয়ার জন্য সংবিধান অনুযায়ী সব থেকে বেশি যতটা সময় পাওয়া যেতে পারে, পুষ্প কমল দাহালপ্রচন্ডততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই আস্থাভোটের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন।

নেপালের সংবিধান বিশেষজ্ঞ নেপালি কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা রাধেশ্যাম অধিকারী বলেন, ওলির ইউএমএল দল সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের নোটিস দেওয়ার দিন থেকে ৩০ দিন গোনা শুরু হয়ে যাবে। তবে দাহাল আগেও পদত্যাগ করতে পারেন। নেপালি কংগ্রেস সিপিএন -ইউএমএলের মধ্যে সমঝোতা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের মতামত দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।

এর একটা কারণ, এই দুটি দলই একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আর এখন তারা সরকার গড়ার জন্য সমঝোতা করছে। একদিকে নেপালি কংগ্রেস সে দেশের পার্লামেন্টে সব থেকে বড় দল আর সিপিএন-ইউএমএল রয়েছে দুই নম্বরে। নেপালি কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রকাশ শরণ মাহাত বলছেন, দুই বড় রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর উচিত এখন তার চেয়ার ছেড়ে সরে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, নতুন জোটের প্রতি আরও বেশ কিছু সংগঠন তাদের সমর্থন জানিয়েছে। আমরাও প্রচন্ডকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছি। মাওবাদীদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক সিনিয়র আইনজীবীও বলছেন, যদিও সংবিধান অনুযায়ী আরও এক মাস দাহাল প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে যেতে পারবেন, তবে পদ আঁকড়ে থাকাটা অনৈতিক। মাওবাদী পার্টির প্রাক্তন সংসদ সদস্য ওই সিনিয়র আইনজীবী রাম নারায়ণ বিদারির কথায়, আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে আমার মতামত জানতে চান তাহলে আমি বলব প্রধানমন্ত্রীর আগেই পদত্যাগ করা উচিত।

×