
টেসলার আয়ে বড় ধরনের ধস নামায় এবার ক্ষোভ ঝাড়লেন ইলন মাস্ক। টেসলার আয় ধস, রাজনৈতিক বিতর্কে জর্জরিত মাস্কের দাবি-সব পরিকল্পিত।বিক্ষোভকারীদের ‘ভাড়াটে’ বলে অভিযুক্ত করে তিনি দাবি করেছেন, পরিকল্পিতভাবেই তাঁর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক আলোচনায় মাস্ক বলেন, “ওরা আসল কারণটা স্বীকার করবে না। বলবে পরিবেশ বা শ্রম অধিকার,এইসব নিয়ে আন্দোলন। কিন্তু ওরা জানে, টাকার বিনিময়েই এসব করছে। বিষয়টা খুব গোছানোভাবেই চলছে।”
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে টেসলার আয় যেখানে গত বছর ছিল ১.৪ বিলিয়ন ডলার, এবার তা কমে এসেছে মাত্র ৪০৯ মিলিয়নে। অর্থাৎ আয় কমেছে প্রায় ৭১ শতাংশ।
যদিও টেসলা জানিয়েছে, পরিবেশবান্ধব গাড়ির জন্য পাওয়া ‘জিরো এমিশন ট্যাক্স ক্রেডিট’ বিক্রি করে তারা ৫৯৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। না হলে আরও বড় লোকসানের মুখে পড়তে হতো।
এক বিবৃতিতে টেসলা বলেছে, “বাণিজ্য নীতির জটিলতা আর বাজারের অনিশ্চয়তা আমাদের খরচ বাড়াচ্ছে, সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত করছে। রাজনৈতিক আবহাওয়াও পরিবর্তন হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে পণ্যের চাহিদায়।”
এই রাজনৈতিক পরিবেশের পেছনে মাস্ক নিজেই অনেকটা দায়ী,এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফেডারেল চাকরি হ্রাস করে ‘সরকারি ব্যয় কমানো’র নাম করে বহু কর্মী ছাঁটাই করেছেন তিনি। ‘DOGE’ নামের এক কথিত সংস্কার প্রকল্প চালিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাজেট কেটে দিয়েছেন।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মাস্কের ‘X’ প্ল্যাটফর্মে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের প্রচার এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে প্রকাশ্য অবস্থান। এমনকি ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানের পর একটি সমাবেশে হাত তুলে বিতর্কিত ভঙ্গিমায় অভিবাদনও জানিয়েছেন তিনি।
মাস্ক ট্রাম্পকে জয়ী করতে প্রায় ২৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন। আর সেই ট্রাম্পের নেতৃত্বে শুরু হওয়া চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে টেসলা পড়েছে বড় ধাক্কায়।
যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বসালে, পাল্টা জবাবে চীনও ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। এর ফলে টেসলার বৈশ্বিক বাজারে রপ্তানি ও উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটেছে।
এই সব মিলিয়ে বিক্ষোভকারীরা এখন মাস্কের বিরুদ্ধে পথে। কেউ ব্যানার হাতে বিক্ষোভ করছে, কেউ স্টিকার লাগাচ্ছে গাড়িতে, আবার কেউ টেসলার শোরুম বা কারখানায় হামলা চালাচ্ছে।
মাস্ক বলেন, আমেরিকা ডুবলে, টেসলাও ডুবে যাবে।তবে এসব নিয়ে বিন্দুমাত্র দায় নিতে রাজি নন ইলন মাস্ক। বরং তার ভাষায়, “DOGE প্রকল্প অপচয় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সফলভাবে কাজ করছে।”
তিনি বলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে আগ্রহী। কারণ আমেরিকা যদি ডুবে যায়, তাহলে টেসলা, আমি, আপনি,সবাই ডুবে যাবো।”
তবে তিনি জানান, আগামী মে মাস থেকে হোয়াইট হাউজে তার সংশ্লিষ্টতা কিছুটা কমিয়ে টেসলার দৈনন্দিন কার্যক্রমে বেশি সময় দেবেন।
বিশ্বজুড়ে টেসলার বিরুদ্ধে বয়কট আন্দোলন তীব্র হচ্ছে। কেউ শুধু প্রতিবাদ জানাচ্ছে, আবার কেউ টেসলার গাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, অফিসে হামলা চালাচ্ছে।
সবশেষ বাজারে আসা ‘সাইবারট্রাক’ মডেলটিও তেমন সাড়া ফেলেনি। বরং বিক্রি কমে গেছে প্রায় সব সেগমেন্টেই।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ চাপের, কিন্তু মাস্ক এখনও আশাবাদী। তার ভাষায়, “আমি এখনো বিশ্বাস করি, চমৎকার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে টেসলা একদিন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবে। অনেক বড় ব্যবধানে।”
সূত্র:https://tinyurl.com/4p4wnckj
আফরোজা