
ছবি: সংগৃহীত।
একটা সময় ভাবলে সায়েন্স ফিকশন বলেই মনে হতো—কিন্তু এবার সেটাই হতে চলেছে বাস্তব! যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে আয়োজিত হতে যাচ্ছে পৃথিবীর প্রথম ‘স্পার্ম রেস’—একটি অনন্য শুক্রাণু দৌড় প্রতিযোগিতা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি, এই প্রতিযোগিতায় অ্যাথলিট নয়, বরং অংশ নেবে জীবনের সূচনা ঘটানো ক্ষুদ্র প্রাণীরা—শুক্রাণু।
স্টার্টআপ সংস্থা ‘স্পার্ম রেসিং’-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই ব্যতিক্রমধর্মী ইভেন্টটি অনুষ্ঠিত হবে ২৫ এপ্রিল, হলিউডের প্যালাডিয়াম প্রেক্ষাগৃহে। আয়োজকদের ধারণা অনুযায়ী, এই অনুষ্ঠানে এক হাজারেরও বেশি দর্শক অংশ নেবেন। যদিও অংশগ্রহণকারীদের খালি চোখে দেখা যায় না, তবুও দর্শকদের উত্তেজনার কোনো ঘাটতি থাকবে না বলেই প্রত্যাশা।
এই প্রতিযোগিতার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে একটি বিশেষ মাইক্রোস্কোপিক রেস ট্র্যাক, যা মানব প্রজনন ব্যবস্থার গঠন ও পরিবেশ অনুকরণ করে তৈরি। রেস ট্র্যাকে থাকবে রাসায়নিক সংকেত, তরল প্রবাহের গতি ও দিক এবং সিঙ্ক্রোনাইজড স্টার্টের মতো বৈজ্ঞানিক উপাদান।
প্রতিযোগিতাটি উচ্চ রেজোলিউশন ক্যামেরা ও হাই-ডেফিনিশন ইমেজিং প্রযুক্তির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। দর্শকরা দেখতে পাবেন লাইভ ধারাভাষ্য, তাৎক্ষণিক রিপ্লে এবং পরিসংখ্যান, একেবারে পেশাদার ক্রীড়ামঞ্চের মতো আয়োজন।
প্রতিটি রাউন্ডে দুইটি শুক্রাণু নমুনা পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করবে। যে শুক্রাণু সবার আগে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাবে, সেটিই হবে বিজয়ী। আয়োজক সংস্থার ভাষায়, “আমরা স্বাস্থ্যকে একটি খেলায় রূপান্তর করছি।”
যদিও গোটা ধারণাটি মজার এবং ব্যতিক্রমী, আয়োজকদের লক্ষ্য কিন্তু অনেক গভীর। তারা চাচ্ছেন মানুষের মধ্যে পুরুষ উর্বরতা হ্রাস বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে। গবেষণা অনুযায়ী, গত ৫০ বছরে বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। শুক্রাণুর গতি ও সক্রিয়তা (মোটিলিটি) পুরুষ প্রজনন স্বাস্থ্যের অন্যতম সূচক, যা সরাসরি প্রজনন সক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
স্পার্ম রেসিং-এর মাধ্যমে আয়োজকরা আশা করছেন, মানুষ কেবল বিনোদনই নেবেন না, বরং এ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করবেন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও সচেতন হবেন।
এই অভিনব প্রতিযোগিতাটি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কারাটেজ এবং ফিগমেন্ট ক্যাপিটাল-এর মতো প্রতিষ্ঠান এতে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং আয়োজক সংস্থা ইতিমধ্যে ১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে।
প্রতিযোগিতায় দর্শকরা তাঁদের পছন্দের ‘রেসার’কে সমর্থন করতে পারবেন এবং এমনকি বাজি ধরার সুযোগও থাকবে—যা আরও বাড়িয়ে দেবে উত্তেজনা ও সম্পৃক্ততা।
সব মিলিয়ে, স্পার্ম রেস এক অভিনব ধারণার বাস্তবায়ন—যেখানে বিজ্ঞানের সঙ্গে মিলেছে খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা। এটি নিছক একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং সমাজে এক নতুন আলোচনার সূচনা, যা পুরুষ প্রজনন স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে শেখাবে।
২৫ এপ্রিলের এই ব্যতিক্রমী ইভেন্ট কি সত্যিই ইতিহাস সৃষ্টি করবে? সে উত্তর দেবে সময়। তবে নিশ্চিতভাবেই এটি বিজ্ঞানের মাঠে এক নতুন অধ্যায় হয়ে উঠতে চলেছে।
সায়মা ইসলাম