ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১

পানামাকে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ১২:৪২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পানামাকে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রবিবার পানামার নেতাদের উদ্দেশ্যে এক কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, যদি পানামা চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বাধ্য হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। 

এটি ছিল রুবিওর প্রথম বিদেশ সফর, এবং তিনি পানামা ছাড়াও এল সালভাদর, কোস্টারিকা, গুয়াতেমালা ও ডোমিনিকান রিপাবলিক সফরের পরিকল্পনা করেছেন।
 

রুবিও রবিবার পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভিয়ার মার্টিনেজ-আচা’র সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনার সময় রুবিও বলেছিলেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পানামা ক্যানাল এলাকায় যে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব রয়েছে, তা ক্যানালের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।" তিনি আরও বলেন, চীনের এই উপস্থিতি ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং পানামার মধ্যে সই হওয়া চুক্তির পরিপন্থী। ওই চুক্তি অনুযায়ী, ক্যানালটি সকল দেশের জন্য খোলা এবং নিরপেক্ষ অবস্থায় থাকতে হবে।


রুবিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, যদি তৎকালীন পরিস্থিতি না বদলানো হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেন, "রুবিও একেবারে স্পষ্ট করেছেন যে, এই অবস্থান অগ্রহণযোগ্য এবং শীঘ্রই পরিবর্তন না হলে যুক্তরাষ্ট্র তার অধিকার রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেবে।"
পানামার প্রেসিডেন্ট মুলিনো সংবাদমাধ্যমকে জানান, রুবিওর সঙ্গে তার আলোচনা ছিল "সম্মানজনক" এবং ইতিবাচক। তিনি আরও বলেন, "আমি মনে করি না যে চুক্তির বৈধতা বা নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কোনও প্রকৃত হুমকি রয়েছে।"
পানামা ক্যানাল, যা আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করে, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য বাণিজ্যের রুট সরবরাহ করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র হলো ক্যানালের প্রধান ব্যবহারকারী। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে রয়েছে চিলি, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া।


১৯৭৭ সালে, পানামার অধিকারী হওয়ার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ক্যানালটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে ১৯৯৯ সালে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে ক্যানালের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পানামার হাতে চলে যায়। এদিকে, চীনা কোম্পানিগুলি সম্প্রতি ক্যানালের চারপাশে অবকাঠামো প্রকল্পে ব্যাপকভাবে জড়িত হয়ে পড়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য নতুন সংকট সৃষ্টি করছে।


এখন, মার্কো রুবিও চীনের এই প্রকল্পগুলোকে নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখছেন। তার মতে, কোনও সম্ভাব্য সংকটের সময় চীনা কোম্পানিরা ক্যানালটিকে একটি ‘চোক পয়েন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। এর ফলে, বিশ্বের বাণিজ্য পরিবহণে বিশাল অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে, এটি স্পষ্ট নয় যে, পানামা যদি রুবিওর অনুরোধ অনুযায়ী ব্যবস্থা না নেয়, তবে পানামা কী ধরনের পরিণতির মুখোমুখি হবে।


পানামা চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে, কিন্তু এতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ বেড়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, চীন লাতিন আমেরিকার একটি বড় বাণিজ্য অংশীদার এবং পানামার এই কৌশল বিশ্ব রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে।
এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়, পানামা যদি মার্কো রুবিওর অনুরোধ অনুযায়ী চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে না আনে, তবে কী ধরনের পরিণতির মুখোমুখি হবে দেশটি। তবে, একটি বিষয় পরিষ্কার,এই পরিস্থিতি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ, পানামা ক্যানালের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে বড় ভূমিকা রাখতে চলেছে।


সূত্র: https://tinyurl.com/y6pms99k

আফরোজা

×