ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন, যা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা এবং আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক নেতারা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং ভবিষ্যতের সম্পর্ক উন্নয়নের আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। তবে, অনেকেই তার আগের নীতিগুলোর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া।
চীন: সম্পর্ক পুনর্গঠনের আশাবাদ
চীন ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে আগ্রহী। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আমরা প্রস্তুত। বাণিজ্য ইস্যুতে টানাপোড়েন সত্ত্বেও, আমরা পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে কাজ করতে চাই।” ট্রাম্প তার প্রচারণায় চীনের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিলেও, বেইজিং তার সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনার প্রত্যাশা করছে।
রাশিয়া: সরাসরি যোগাযোগের প্রত্যাশা
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পুতিন বলেন, “ট্রাম্পের দল যে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের আগ্রহ দেখিয়েছে, আমরা তা স্বাগত জানাই। এছাড়াও, বিশ্বযুদ্ধ এড়ানোর তার উদ্যোগ প্রশংসনীয়।” রাশিয়া আশা করছে যে নতুন নেতৃত্ব বিশ্ব শান্তির জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
ন্যাটো: প্রতিরক্ষায় নতুন মাত্রা
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন, “ট্রাম্পের নেতৃত্বে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার প্রতিরক্ষা জোট নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। আমাদের প্রতিরক্ষা খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ এবং উৎপাদন কার্যক্রমে গতি আসবে।”
ইসরায়েল:মৈত্রীর নতুন অধ্যায়
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মৈত্রীর সেরা দিনগুলো সামনে রয়েছে। আমরা একসঙ্গে ইরানের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে এবং গাজায় স্থিতিশীলতা আনতে কাজ করব।” নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পূর্ববর্তী উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করেন এবং তাকে ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।
ফিলিস্তিন: শান্তির প্রত্যাশা
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত। এই দৃষ্টিভঙ্গি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সুযোগ দেবে।” আব্বাস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
জার্মানি: ঘনিষ্ঠ মিত্রতার গুরুত্ব
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে “ঘনিষ্ঠ মৈত্রীর প্রতীক” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্ক জার্মানির পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম ভিত্তি। আমরা একসঙ্গে কাজ করে বর্তমান বৈশ্বিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারব।”
পানামা: ক্যানাল নিয়ে বিতর্ক
পানামার প্রেসিডেন্ট জোসে রাউল মুলিনো ট্রাম্পের মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “পানামা ক্যানাল আমাদের গর্বের প্রতীক। এটি পানামারই থাকবে, এবং আমরা কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করব না।” মুলিনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর জোর দিলেও, তিনি স্পষ্ট করে দেন যে জাতীয় স্বার্থে কোনও আপস হবে না।
ইউক্রেন: নতুন দিনের প্রত্যাশা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের অভিষেককে “পরিবর্তন এবং আশা”র দিন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “আজ আমরা কেবল যুক্তরাষ্ট্রে নয়, সারা বিশ্বে শান্তি এবং স্থিতিশীলতার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা দেখতে পাচ্ছি।”
সূত্র: আল-জাজিরা
আফরোজা