ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা

মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রুশ ভূখ-ে ইউক্রেনের হামলা

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:২৭, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রুশ ভূখ-ে ইউক্রেনের হামলা

এটিএসিএমএস ব্যবহার করে রাশিয়ার ব্রিয়ানস্কে হামলা চালায় ইউক্রেন

যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূখ-ে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। মঙ্গলবার এ হামলা হয়েছে বলে রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে এই হামলা চালানো হয়। একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পড়ার পর আগুন ধরে গেলে দ্রুত তা নেভানো হয়।

এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এদিকে ইউক্রেনের এই হামলার ফলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার শুরু হয়ে যেতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ পশ্চিমা বিশ্ব এবং ইউক্রেনকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়ে মঙ্গলবার এক ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। ডিক্রিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। খবর বিবিসির।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেন মঙ্গলবার সকালে আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) ব্যবহার করে রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এলাকায় হামলা চালিয়েছে। ৫টি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের কারণে ওই এলাকায় একটি সামরিক স্থাপনায় আগুন ধরে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানোর কথা ইউক্রেনের গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো ইউক্রেন সরকারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করে, তারা রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এলাকায় একটি গোলাবারুদের গুদামে হামলা চালিয়েছে। তবে এই হামলায় এটিএসিএমএস ব্যবহার করা হয়েছে কি না সেটা তারা নিশ্চিত করেনি। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটারের মতো দূরে কারাচেভ শহরের কাছে একটি ডিপোতে ওই হামলা হয়েছে। হামলার পর ১২টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সামরিক বাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুমোদনের পর প্রথমবারের মতো রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করল ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। বাইডেন প্রশাসন রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার জন্য দূরপাল্লার মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার দু’দিন পরই এই হামলার খবর পাওয়া গেল। 
তবে এতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র (এটিএসিএমএস) দিয়ে এই ধরনের দূরপাল্লার হামলার অনুমতি এতদিন দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। কারণ তারা ভেবেছিল, এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করলে যুদ্ধ আরও বাড়বে। তবে ৫ নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পর এই নীতি থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির অধীনে কিয়েভকে মার্কিন সমর্থন দেয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদন মতে, ইউক্রেন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অধিকৃত ইউক্রেনীয় ভূখ-ে রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম ব্যবহার করছে, যা সাধারণত এটিএসিএমএস নামে পরিচিত।

কিন্তু এতদিন যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পুতিনের স্বাক্ষর করা ডিক্রিতে সই করার মধ্য দিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ সমর্থিত হলে একটি অ-পারমাণবিক রাষ্ট্রে মস্কোর পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করার সুযোগ আরও বিস্তৃত করেছেন পুতিন। প্রতিবেদন মতে, মার্কিন সরকার ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার পরে এবং রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের ১০০০তম দিনে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুতিন।

এর আগে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের এক হাজারতম দিনে মঙ্গলবার রাশিয়ার কাছে নতি স্বীকার না করার অঙ্গীকার করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দখলদারদের কাছে ইউক্রেন কখনো আত্মসমর্পণ করবে না এবং আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের জন্য রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে সাজা দেওয়া হবে। ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সামি অঞ্চলে ড্রোন হামলায় এক শিশুসহ ৮ জন নিহত হয় এবং আলাদা আরেকটি হামলায় ৮৯ জন নিহত হয়। ছোট্ট শহর হালখিভের আবাসিক ভবনে ড্রোন হামলায় দুই শিশুসহ ১২ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের ন্যাশনাল পুলিশ বাহিনী। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক্সে লিখেছেন, ভবনটি ছিল স্থানীয় স্কুলের একটি ডরমিটরি।

রাশিয়ার এসব হামলার পরই ইউক্রেন যুদ্ধের ১০০০ দিনে এসে নতি স্বীকার না করার অঙ্গীকার করেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক বিশেষ অধিবেশনেও জেলেনস্কির ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। জেলেনস্কি এক্সে লেখেন, রাশিয়া আমাদের সীমান্ত অঞ্চলে ত্রাস সৃষ্টি করে চলেছে। তাদের হামলায় এটিই প্রতিপন্ন হচ্ছে যে পুতিন চান যুদ্ধ চলতে থাকুক। তিনি শান্তি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী নন। 
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। সেই হিসাবে মঙ্গলবার এই যুদ্ধের এক হাজার দিন পূর্ণ হয়। এক হাজার দিন পরেও বিভিন্ন ফ্রন্টে লড়াই চলছে। এখনো কিয়েভে মাঝে মধ্যেই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে আবার প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে জো বাইডেন রাশিয়ার ভেতরে মার্কিন রকেট হামলা করার অনুমতি ইউক্রেনকে দিয়ে দিয়েছে। আর রাশিয়া হুমকি দিয়েছে, এরকম আক্রমণ হলে তার উপযুক্ত ও কড়া জবাব দেওয়া হবে। তবে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এসে এই নীতির পরিবর্তন করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু এই পদক্ষেপ নিলে ৩৩ মাস ধরে চলা যুদ্ধের গতিপ্রকৃতির বদল হবে না। এই যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। লাখ লাখ মানুষ বাইরের দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ইউরোপে সবচেয়ে বড় সংঘাত। এর ফলে সামরিক দিক থেকে কার কত ক্ষতি হয়েছে তা গোপন রাখা হয়েছে। গোয়েন্দাদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পশ্চিমা দেশগুলো যে হিসাব করেছে, তাতে এক দেশের হিসাবের সঙ্গে অন্য দেশের হিসাবের ব্যাপক ফারাক রয়েছে। তবে সব রিপোর্টই বলছে, দুপক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। ইউক্রেনের প্রতিটি অঞ্চলে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই যুদ্ধের সময় শোক নেমে এসেছে। বড় শহর থেকে দূরের গ্রাম পর্যন্ত সব জায়গায় সামরিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়মিত হয়েছে, রাতেও বারবার সাইরেন বেজেছে। মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করেছেন। ঘুমহীন রাত কাটিয়েছেন তারা।

×