ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

পারবেন কী নতুন ইতিহাস গড়তে কমলা হ্যারিস!

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ৬ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ০৭:৩৮, ৬ নভেম্বর ২০২৪

পারবেন কী নতুন ইতিহাস গড়তে কমলা হ্যারিস!

কমলা হ্যারিস। ছবি: রয়টার্স

আরেক ইতিহাস গড়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছেন কমলা হ্যারিস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্টের দৌড়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি। ছয় মাস আগেও তা জানতেন না কমলা হ্যারিস। হ্যারিস নির্বাচনী দৌড়ে শামিল হওয়ার পর গতি পায় প্রচার। শক্ত প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপরীতে হ্যারিসকে সমর্থন দিতে এক কাতারে দাঁড়ান সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারসহ বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা। প্রচারে নেমে প্রথম সমাবেশেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যায় কমলা হ্যারিসকে। 

২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকেই ফের প্রার্থী করেছিল ডেমোক্রেটিক পার্টি। কিন্তু তার বয়স নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক প্রার্থী। চাপের মুখে বাইডেন সরে দাঁড়ালে পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন কমলা হ্যারিস।

একজন আইনজীবী থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া কমলা হ্যারিস অনেক প্রথমের জন্ম দিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ভারতীয়-আমেরিকান সেনেটর। ক্যালিফোর্নিয়ার প্রথম নারী ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি। প্রথম দক্ষিণ এশীয় নারী অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ। এবং এশীয় আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্টও। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একজন প্রার্থী হিসাবে কমলা হ্যারিস এখন নতুন ইতিহাসের সামনে। পারবেন কী ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাতে!

মা ভারতীয়-বাবা জ্যামাইকান
ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর কমলা হ্যারিসের জন্ম। মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত, বাবা জ্যামাইকান আমেরিকান। ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে সৌভাগ্য, সৌন্দর্য ও শক্তির দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক আর সংস্কৃত শব্দ ‘কমল’ বা পদ্মফুলের সমার্থক শব্দে মেয়ের নাম ‘কমলা’ রেখেছিলেন তার মা শ্যামলা গোপালন।

শ্যামলা এন্ডোক্রাইনোলজি নিয়ে গবেষণার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা করেন তিনি। সেই সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন নাগরিক অধিকার আন্দোলনে।

বিয়ে করেন ডোনাল্ড হ্যারিসকে। জামাইকা (তখনও ব্রিটিশ উপনিবেশ) থেকে ষাটের দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে থিতু হয়েছিলেন হ্যারিস। শ্যামলার মতো তিনিও যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কমলা হ্যারিসক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হ্যারিস ছিলেন অর্থনীতির ছাত্র। তিনিও স্ত্রীর সঙ্গে নাগরিক অধিকার আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। তাদের দুই মেয়ে কমলা ও মায়া বেড়ে উঠেছেন মিশ্র সংস্কৃতিতে। গির্জার কোরাসে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি তারা নিয়মিত মন্দিরেও যেতেন।

কমলার যখন সাত বছর বয়স। তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। দুই মেয়েকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান শ্যামলা। মায়ের কাজের জন্য কমলা হ্যারিসের শিক্ষাজীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে কানাডার কিবেক শহরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন শ্যামলা। কিবেকের পর হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন হ্যারিস। ডক্টরেট করেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হেস্টিংস কলেজ অব দ্য ল থেকে।

রাজনীতিতে হাতেখড়ি
হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় কমলা হ্যারিসের। নিয়মিত বিতর্কে অংশ নিয়ে বাগ্মী হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল আইনজীবী হওয়ার। সে স্বপ্ন তিনি পূরণ করেছেন। দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন আইনজীবী হিসেবে। তিনি বরাবর সরব হয়েছেন মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে। তার কর্মজীবন অনেকটাই সফল।

১৯৯০ সালে হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যালামেডা কাউন্টির ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির দায়িত্ব পান। এরপর ২০১০ সালে ক্যালিফর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হন। প্রথম দক্ষিণ পূর্ব এশীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে তিনি এই দায়িত্বে সম্মানিত হন।

২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে মনোনয়ন দৌড়ে শামিল হয়েছিলেন কমলা হ্যারিস। তাকে স্পটলাইটে ফিরিয়ে আনেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বাইডেনের সহযোদ্ধা হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর হ্যারিস টুইট করেন, এই মনোনয়নের জন্য আমি গর্বিত। বাইডেন যাতে প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, তার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট
২০২০ সালের নির্বাচনে হ্যারিস প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এবং প্রথম এশিয়ান-মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েন। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন হ্যারিস। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট জেন্টেলম্যান হন তার স্বামী আইনজীবী ডাগ এমহফ।

ওই বছর নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিকিৎসার জন্য কাজ থেকে বিরতি নিতে হয়েছিল। তখন  ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় ছিলেন হ্যারিস।

মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিস মার্কিন সেনেটের প্রেসিডেন্টও ছিলেন। সেই ক্ষমতা বহুবার ব্যবহার করে নজির গড়েছেন হ্যারিস। 

Took some time today to hear from voters in Pennsylvania and ask for their support.

There's still time to join us on the doors: https://t.co/ZaRpcqNdUT pic.twitter.com/J7E8ObhEjp

— Kamala Harris (@KamalaHarris) November 5, 2024

 

 

সূত্র: রয়টার্স, ইন্ডিয়া টুডে।

এসআর

×