আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি | তাই-তো শহীদদের স্মরণে বেদনা ও উৎসব মুখর পরিবেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য মিশিগানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করলো মৃধা বেঙ্গলি কালচারাল সেন্টার। দিবসটি পালন উপলক্ষে রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ওয়ারেন সিটিস্থ ২২০২১, মেমপিস এভিনিউস্থ উক্ত কালচারাল সেন্টারের হল রুমে আয়োজন করা হয় এক আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আরও পড়ুন : মালয়েশিয়ায় ১৪ হাজারেরও বেশি অবৈধ অভিবাসী আটক
অনুষ্ঠানের প্রারম্ভেই মিশিগানের বাংলা স্কুল অব মিউজিক এর নানা বয়সী শিল্পীরা দলীয়ভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে। তারপর ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য জীবন উৎসর্গকারী সালাম, রফিক,বরকত ও জব্বারের মতো নাম না জানা অসংখ্য শহীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাদের রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করেন আমন্ত্রিত অতিথি ও সংশ্লিষ্ট আয়োজকগণ। পরে সংশ্লিষ্ট হল রুমে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পনের মধ্য দিয়ে ভাষা সৈনিকদের প্রতি সমান প্রদর্শন করে মৃধা বেঙ্গলি কালচারাল সেন্টার।পরবর্তীতে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় | এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও দার্শনিক ড. দেবাশীষ মৃধা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. দেবাশীষ মৃধা বলেন, পৃথিবীতে অনেক জাতি স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে। কিন্তু ভাষার জন্য একমাত্র বাঙালি জাতি রক্ত দিয়ে বিশ্বময় ইতিহাস সৃষ্টি করেছে| যা সত্যি বিরল। পৃথিবীতে আর কোনো জাতির নিজ ভাষার জন্য যুদ্ধের ইতিহাস নেই। বাঙালির এমন আত্মদান বিশ্বের ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে থাকবে | এছাড়া অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে মায়ের মুখের ভাষা বাংলা আজ আমাদের শুধু নয়,কোন কোন দেশে ভিন ধর্মীয় চেতনার মানুষ এই ভাষা নিজের মুখেই বলে বেড়াচ্ছে । এই ত্যাগের বাংলা ভাষাই এখন আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা। এজন্য আমরা বাঙালি জাতি গর্বিত। এদিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হলে সুকন্যা শুক্লার কোরিওগ্রাফিতে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী,আমি কি ভুলিতে পারি এই মর্মস্পর্শী’ গানটি গাইলে উপস্থিত দর্শক হারিয়ে যান সেই মুহূর্তের সময়গুলোতে। তা ছাড়াও সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে মৃত্তিকা সরকার, অর্পিতা সেন, আরুশি সেন, মাহিকা সরকার। একক সঙ্গীত ‘আমি বাংলায় গান গাই' পরিবেশন করেন আদ্রিজা চক্রবর্তী। ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি পরিবেশন করেন সঙ্গীতা পাল, সুস্মিতা চৌধুরী পরিবেশন করেছেন ‘ও আমার দেশের মাটি’ গানটি। কবিতা আবৃত্তি করেছেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার অনন্ত সাইফ, পপি দাস ও জনা দাস।
এদিকে দলীয় নৃত্য ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ পরিবেশন করেন মৃত্তিকা সরকার ও অর্পিতা সেন।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী' ভায়োলিনের সুরে দর্শকদেরকে মুগ্ধ করেছেন সামান্তা চৌধুরী মেগা।
তাছাড়াও মহুয়া দাস সরকারের কোরিওগ্রাফিতে ‘দে তালি বাঙ্গালী’ দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন স্নেহা দাস, হৃদিতা দাস, সৃজিতা রায়, দেবশ্রী রায়। দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন নিবেদিতা বড়ুয়া ও মহুয়া দাস সরকার। অনুষ্ঠানে একক গান পরিবেশন করেন অভিষেক বালা ও অনামিকা রায়।
বাংলা স্কুল অব মিউজিকের ক্ষুদে শিল্পীরা বেশ কটি একক ও কোরাস সঙ্গীত পরিবেশন করেছে। অনুষ্ঠানে মিশিগানের জনপ্রিয় ব্যন্ড দল মিশিগানের 'ব্যান্ড দল হৃদম' অব বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি গান গেয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন শিল্পীরা । অনুষ্ঠানের আকর্ষণীয় পর্ব ছিল শিশু শিল্পীদেরকে মেডেল পড়ানো | মৃধা বেঙ্গলি কালচারাল সেন্টারের পক্ষ থেকে শিল্পীদের মেডেল পরিয়ে দেন ড. দেবাশীষ মৃধা, সুপ্রভাত মিশিগান সম্পাদক চিন্ময় আচার্য্য, পূর্নেন্দু চক্রবর্তী অপু এবং মৃদুল কান্তি সরকার।প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় ছিলেন মৌসুমী দত্ত। সাউন্ড ইন্জিনিয়ারিং সিস্টেমে ছিলেন রাজর্সি চৌধুরী গৌরব। অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মৃধা বেঙ্গলি কালচারাল সেন্টারের চিফ কর্ডিনেটর মৃদুল কান্তি সরকার। এদিকে মহান আমত্মর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কানাডার মন্ট্রিয়েলে ও মিশিগানের হেমট্রামিক,ওয়ারেন সহ বিভিন্ন সিটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যক্তিগত,সামাজিক- রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক ও কমিউনিটির পক্ষ থেকেও ফুলেল ভালবাসায় শহীদদের কে স্মরণ করা হয়।
তাসমিম