তুরস্ক ও ইসরাইলের মধ্যকার উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। সম্প্রতি তুরস্কের একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাহসী মন্তব্য করে জানিয়েছেন, তুর্কি সেনাবাহিনী চাইলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তেলআবিবে প্রবেশ করতে সক্ষম। এই বক্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনার ঝড়।
তুরস্কের গবেষণা সংস্থা ‘সোনার রিসার্চ’-এর সভাপতি হাকান বাইরাক্সি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেন, “এটি কোনো হুমকি নয়, বরং এটি তুরস্কের জাতীয় সামরিক সক্ষমতার একটি বাস্তবচিত্র।” তার মতে, তুরস্ক এখন এমন এক সামরিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে, যা চাইলে পুরো অঞ্চলের ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দিতে পারে।
৭ এপ্রিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বৈঠকের পরপরই বাইরাক্সির এই মন্তব্য আসে। বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইল সিরিয়ায় তুরস্কের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষ চায় না। অন্যদিকে, ট্রাম্প ইসরাইল ও তুরস্কের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তবে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ইসরাইলের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, তুরস্ক সিরিয়ায় একটি নতুন ‘অটোমান সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলতে চায়। তিনি সতর্ক করে বলেন, “তারা যদি লাল সীমানা অতিক্রম করে, তাহলে ইসরাইলও চুপ করে থাকবে না।”
তুরস্কের পক্ষ থেকে পাল্টা জবাবে বলা হয়েছে, ইসরাইল গাজা, লেবানন এবং সিরিয়ায় বারবার আক্রমণ চালিয়ে তাদের মৌলবাদী মনোভাব এবং আগ্রাসী চরিত্র প্রকাশ করেছে। তুর্কি কর্মকর্তারা আরও বলেন, ইসরাইল এখন গোটা অঞ্চলের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত সপ্তাহে সিরিয়ার একটি সামরিক বিমানবন্দরে ইসরাইলি হামলার পর দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ইসরাইল দাবি করেছে, এই হামলার মাধ্যমে তারা তুরস্ককে একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। হামলায় একটি বিমান ঘাঁটি এবং দামেস্কের একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, তুরস্ক সম্প্রতি সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করছে। তারা সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি বিমান ঘাঁটি ব্যবহারের পরিকল্পনাও করছে। ইসরাইল এই পদক্ষেপকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। তাদের আশঙ্কা, যদি তুরস্ক সিরিয়ায় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বসায়, তবে ইসরাইলের আকাশসীমায় প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে, ইসরাইলি মিডিয়ায় ‘নাগেল কমিশনের’ একটি প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এতে প্রতিরক্ষা বাজেট এবং সেনা গঠনের বিষয়ে মতামত দেয়া হয়েছে। যদিও প্রতিবেদনে তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কোনও সরাসরি সুপারিশ নেই, তবুও অনেকেই এটিকে সম্ভাব্য সংঘাতের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তুরস্ক, সিরিয়া এবং মিশর মিলিতভাবে ইসরাইলের বিরোধিতা করতে পারে—এমন আশঙ্কা কিছুটা হলেও উঁকি দিচ্ছে। তবে তারা এটাও বলছেন, এই দেশগুলোর কেউই সরাসরি ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চায় না।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন থেকেই যায়— তুরস্ক কি আসলেই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তেলআবিবে প্রবেশ করতে পারবে, নাকি এটি কেবল কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল? উত্তরের জন্য নজর রাখতে হবে পরবর্তী রাজনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপের দিকে।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/airmVVr_-vo?si=EUGl-C9fl765leUv