
ছবি: প্রতিকী
হ্যাঁ, পিরিয়ডের সময় কান্না আসা বা মন খারাপ লাগা অনেক নারীর জন্যই সাধারণ একটি বিষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ৭৫ শতাংশ নারী পিরিয়ডের আগে ও সময়ে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের শিকার হন, যা প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS) নামে পরিচিত।
অনেক সময় আপনি অন্য কোনো PMS লক্ষণ না পেলেও শুধু মন খারাপ বা কান্নাকাটি অনুভব করতে পারেন। এক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই—হরমোনের ওঠানামাই এর পেছনে মূল কারণ হতে পারে।
কেন এমন হয়?
এই আবেগময় মুহূর্তের পেছনে মূলত দায়ী হরমোনের ওঠানামা।
- হরমোন কমে যাওয়া: ডিম্বস্ফোটনের পর ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা হঠাৎ কমে যায়। এতে সেরোটোনিন নামক মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থের মাত্রাও কমে যায়, যা মন ভালো রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- ঘুমের সমস্যা: কম সেরোটোনিনের কারণে ঘুমের মান খারাপ হয়, আর পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে মেজাজ খারাপ হওয়া, কান্না পাওয়া স্বাভাবিক।
- খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: PMS-এর সময় অনেকেই চিনি বা কার্বোহাইড্রেটজাত খাবারের প্রতি আসক্ত হন। এগুলো সাময়িকভাবে সেরোটোনিন বাড়ালেও পরে বিষণ্নতা বাড়াতে পারে।
- ব্যায়াম না করা: পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা বা ফোলাভাবের কারণে অনেকেই ব্যায়াম বাদ দেন। কিন্তু সক্রিয় না থাকলে মেজাজ আরও খারাপ হতে পারে।
চিকিৎসা ও করণীয়:
যদি কান্না বা মন খারাপ কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু কার্যকর চিকিৎসা হতে পারে—
- জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি: হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- এন্টিডিপ্রেসেন্ট (SSRI): বিষণ্নতা কমাতে ব্যবহৃত হয়।
যেভাবে সামলাতে পারেন:
- ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার খান: যেমন ফ্যাটি ফিশ, যা বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করে।
- ব্যায়াম করুন: এন্ডরফিন নিঃসরণ হয়, যা মন ভালো করে।
- লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন: ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
- হাসির সিনেমা দেখুন বা প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান।
- যোগব্যায়াম ও সুগন্ধি তেল (অ্যারোমাথেরাপি) ব্যবহার করুন।
- রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: ঘুমের আগে মোবাইল বন্ধ রাখা ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা সহায়ক হতে পারে।
চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলার সময় কখন?
যদি মন খারাপ, উদ্বেগ, অবসাদ, আত্মহীনতা বা আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসে—তবে দেরি না করে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। বিশেষ করে যারা বাইপোলার ডিসঅর্ডার, প্রধান বিষণ্নতা, অ্যানজাইটি বা খাওয়ার সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য পিরিয়ডের সময় এই অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। একে বলে Premenstrual Exacerbation।
আরও মারাত্মক হলে এ সমস্যাকে Premenstrual Dysphoric Disorder (PMDD) বলা হয়, যা PMS-এর চেয়ে অনেক বেশি তীব্র মানসিক প্রভাব ফেলে।
পিরিয়ডের সময় কান্না পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। সাধারণ পরিবর্তন বা খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার মাধ্যমে এটি অনেক সময় সামাল দেওয়া যায়। তবে মানসিক অবসাদ যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সুত্র: https://www.healthline.com/health/womens-health/crying-during-period#takeaway
রবিউল হাসান