
ছবি: প্রতিকী
মাসিকের যন্ত্রণার কথা বলার আগে একটা বিষয় জেনে রাখা ভালো — আপনার ব্যথা গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য। বয়স যাই হোক, যদি মাসিকের সময় পেটের নিচে, পিঠে বা তলপেটে ব্যথা হয়, কিংবা যদি দীর্ঘস্থায়ী বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ এগুলো হতে পারে কোনো গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যার লক্ষণ।
কিশোরী বয়স
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ১২ বছর বয়সে মেয়েদের প্রথম মাসিক শুরু হয়। তবে এর আগে-পরে কিছু বছর পার্থক্য হওয়াও স্বাভাবিক। প্রথম কয়েক বছর পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কখনো কয়েক মাস নেই, আবার হঠাৎ করে প্রচুর রক্তপাত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাসিকের পুরো বিষয়টি হরমোনের ওঠা-নামার ওপর নির্ভর করে। এ সময় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন ঠিকমতো কাজ না করায় পিরিয়ড এলোমেলো হয়।
অনেকের জন্য এই সময়টা ভয়, লজ্জা আর বিভ্রান্তিরও হতে পারে। তবে পরিবার থেকে ইতিবাচক সহযোগিতা পেলে এই সময়টা সহজেই সামলানো যায়।
২০-এর দশক
২০ বছর বয়সে এসে অধিকাংশ নারীর মাসিক নিয়মিত হতে শুরু করে। কারণ এ সময় ডিম্বাণু উৎপাদন (ovulation) নিয়মিত হয়। তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার বা হরমোনাল জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল নেওয়ার ফলে কারও কারও মাসিকের ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে।
অনেক নারী এ সময় তাদের যৌনজীবন নিয়েও সিদ্ধান্ত নেন — যেমন পিরিয়ড চলাকালে যৌনমিলন করবেন কি করবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিরিয়ড চলাকালীন যৌনমিলন নিরাপদ, তবে একটু এলোমেলো হতে পারে।
এ বয়সে নানা ধরনের গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যাও ধরা পড়তে পারে, যেমন পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), এন্ডোমেট্রিওসিস, কিংবা অতিরিক্ত ব্যথাযুক্ত মাসিক।
৩০-এর দশক
৩০-এর দশকে প্রবেশ করলে মাসিক সাধারণত নিয়মিত থাকে। তবে গর্ভধারণের চিন্তা বা অভিজ্ঞতা এই সময় বড় ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় পিরিয়ড বন্ধ থাকে, আর সন্তান জন্মের পর কারও পিরিয়ড দ্রুত ফিরে আসে, আবার কারও ক্ষেত্রে তা বিলম্বিত হয়।
এ সময় থেকেই কিছু নারীর জন্য পেরিমেনোপজ (menopause-এর পূর্বধাপ) শুরু হতে পারে — হরমোনের ওঠানামার কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে শুরু করে।
৪০-এর দশক
৪০-এর দশকে প্রবেশের পর মাসিক একেবারে অনিয়মিত হয়ে যায়। কখনো দীর্ঘ বিরতি, কখনো অপ্রত্যাশিত রক্তপাত — সবই সম্ভব। বড় বড় ব্লাড ক্লট বা অতিরিক্ত রক্তপাতও দেখা দিতে পারে।
এ সময় আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন রাত্রিকালীন ঘাম, মুড সুইং, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পাতলা হওয়া ইত্যাদি, যা পেরিমেনোপজের ইঙ্গিত দেয়।
৫০-এর দশক
যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গড়ে ৫১ বছর বয়সে নারীরা মেনোপজে পৌঁছান — অর্থাৎ টানা ১২ মাস মাসিক না হলে একজন নারী মেনোপজে পৌঁছেছেন বলে ধরা হয়।
মেনোপজের পর বেশিরভাগ নারীর হরমোনগত পরিবর্তন থেমে আসে। তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে মৃদু হরমোনাল ওঠানামা থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেনোপজের সময় মানসিক সমর্থন জরুরি। কারণ সমাজে মেনোপজ নিয়ে এখনো খোলামেলা আলোচনা হয় না। অভিনেত্রী ভায়োলা ডেভিস সম্প্রতি টকশোতে মেনোপজ নিয়ে খোলামেলা কথা বলে এই ট্যাবু ভাঙার চেষ্টা করেছেন।
আমাদের উচিত — মাসিক থাকুক বা না থাকুক — নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে সাহসের সাথে কথা বলা। কারণ নিজেকে জানার প্রথম ধাপই হলো নিজের শরীরকে জানার চেষ্টা করা।
সূত্র: https://www.healthline.com/health/womens-health/period-changes-20s-30s-40s-50s
রবিউল হাসান