
ছবি: সংগৃহীত।
কিডনির প্রধান কাজ হলো শরীর থেকে টক্সিন বা বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া। কিন্তু কিডনি সুস্থ না থাকলে এই টক্সিন শরীরে জমতে শুরু করে, যা ধীরে ধীরে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই সুস্থ থাকতে কিডনির সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ৩০ বছরের পর মহিলাদের মধ্যে ক্রনিক কিডনি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকলে এই ঝুঁকি আরও বাড়ে।
কিডনিতে সমস্যা দেখা দিলে খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রার ওপর নজর দিতে হয়। শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমে গেলে কিডনির কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়। তাই এমন খাবার বেছে নিতে হয়, যাতে দৈনিক পটাশিয়াম গ্রহণ ২০০ মিলিগ্রামের নিচে থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিনের ঘাটতির পাশাপাশি ভিটামিন-ডি-এর অভাব কিডনি বিকলের অন্যতম কারণ। ভিটামিন-ডি-এর ঘাটতির ফলে শরীর ক্যালসিয়াম শোষণে অক্ষম হয়ে পড়ে, যার ফলে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যায়। এতে প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত হরমোন ক্ষরণ করতে থাকে, যা শরীরে আরও জটিলতা তৈরি করে।
ভিটামিন-ডি শুধু হাড়ের জন্যই নয়, পেশি শক্তিশালী করতে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষ ভিটামিন-ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছেন।
বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুবন্ধের পর এবং পুরুষদের নির্দিষ্ট বয়সের পর ভিটামিন-ডি-এর অভাব বেশি দেখা যায়। ফলে এ সময়ে খাদ্যাভ্যাসে ও জীবনযাপনে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।
ভিটামিন-ডি একটি স্নেহপদার্থে দ্রবণীয় ভিটামিন, যা 'সানশাইন ভিটামিন' নামেও পরিচিত। সূর্যের আলো, তৈলাক্ত সামুদ্রিক মাছ, দুগ্ধজাত খাদ্য, ডিমের কুসুম ও কিছু সবজিতে এই ভিটামিন পাওয়া যায়।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, অতিরিক্ত ভিটামিন-ডি গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বেশি ভিটামিন-ডি রক্তনালিতে ক্যালসিয়াম জমিয়ে 'ক্যালসিফিকেশন' সৃষ্টি করতে পারে, যা হাইপারক্যালসিমিয়া, হার্টের সমস্যা ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের তথ্য অনুযায়ী, বয়সভেদে দৈনিক ভিটামিন-ডি প্রয়োজনীয়তার মাত্রা হলো: ০-১ বছর বয়সে ০.০১ মিলিগ্রাম, ১-১৮ বছর বয়সে ০.০১৫ মিলিগ্রাম, ১৯-৭০ বছর বয়সে ০.০১৫ মিলিগ্রাম, ৭১ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সে ০.০২ মিলিগ্রাম।
ভিটামিন-ডি এর অতিরিক্ত মাত্রার ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে অনেক বিশেষজ্ঞ ভিটামিন-কে গ্রহণের পরামর্শ দেন। ভিটামিন-ডি রক্তে ক্যালসিয়াম বাড়ালেও, ভিটামিন-কে তা হাড়ে সঞ্চয় করতে সহায়তা করে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে। প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন-কে পাওয়া যায় সবুজ শাক-সবজি, ডিমের কুসুম, মাংসের মেটে ও চিজে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে ভিটামিন-ডি ও ভিটামিন-কে-এর সঠিক সমন্বয় রক্ষা করলে কিডনি ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব।
সায়মা ইসলাম