ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

পারকিনসনে নিউরোসার্জিক্যাল চিকিৎসা

ডা. হারাধন দেবনাথ

প্রকাশিত: ১৬:৪০, ২৮ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৬:৪৭, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

পারকিনসনে নিউরোসার্জিক্যাল চিকিৎসা

প্রতি বছরের ১১ এপ্রিল বিশ্ব পারকিনসন দিবস পালিত হয়। দিবসটি নিয়ে দেশেও নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- knitters or crocheters to create a beautiful blue tulip। আসলে পারকিনসন রোগীর পরিচর্যায়ই গুরুত্বপূর্ণ।
পারকিনসন রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষণ পাওয়া কঠিন। মধ্যবয়সী কোনো রোগীর যদি হাতে কাঁপুনি বা মাথায় কাঁপুনি হয় তাহলে ধারণা করা যেতে পারে যে তিনি পারকিনসনে আক্রান্ত। হাতের কাঁপুনি অন্যান্য রোগেও হতে পারে। যেমন দুশ্চিন্তা, শরীরে অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন তৈরি। বৃদ্ধ বয়সে বা সেনাইল ট্রেমার এবং মোটাবলিক কারণে কাঁপুনি হয়। রোগ নির্ণয়ের জন্য স্পেক্ট বা পেট টেস্ট করা যেতে পারে।  চিকিৎসা করলেও ডিজিজ প্রসেস থেমে থাকে না। এখনো এমন কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি যা দিয়ে ব্রেইনকে এই রোগের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। সাধারণত ডোপামিন নামে নিউরোট্রান্সমিটারের অভাবে এই রোগ হয়। লোভোডোপা নামক ওষুধ ডিকার্বোক্সিলেজ ইনহিবিটরের সঙ্গে মিশ্রিত করে রোগীকে খেতে দেওয়া হয়। যাতে ডোপা ব্রেইনের বাইরে শরীরের অন্য কোনো জায়গায় না ভেঙে গিয়ে ব্রেইনের  ভেতর ডোপামিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। যার ফলে রোগী নিয়মিত ওষুধ খেলে এই রোগের লক্ষণ প্রশমিত হয়। এই ওষুধ সেবনের ফলে স্মৃতিভ্রম, বিষণ্নতা, অন্যান্য মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার হতে পারে। এই রোগের চিকিৎসায় ডোপামিন এগনিস্ট ওষুধ, যেমন কেবারগুলিন, কমট ইনহিবিটর, এন্টাকেপোন ইত্যাদি ওষুধে লিভারের ক্ষতি করতে পারে।   
চিকিৎসা : সেলেগেলিন এবং রিসেলেগেলিন নামক ওষুধ ডোপামিন অতিরিক্তি ভাঙা থেকে রক্ষা করে। ব্রেইনে ডোপামিনের পরিমাণ নরমাল থাকে। বেশি জটিলতা হলে এপোমরফিন ইনজেকশন দেওয়া যায়। কন্টিনিওয়াজ ডোপামিন ইনফিউশন দেওয়া যায়। অতিরিক্ত লক্ষণ, যেমন বমি হলে ডমপেরিডন দেওয়া হয়। ব্লাডপ্রেশার কমে গেলে প্রেশার বাড়ানোর জন্য মিনারেলোকর্টিকয়েড দিতে হবে। রোগীর ব্যথা বেড়ে গেলে কন্ট্রোলড রিলিজড ডোপামিন দিতে হবে। যদি রোগীর স্মৃতিভ্রম হয় তাহলে রিভাস্টিগমিন, কিউটাপাইন, ক্লোজাপাইন ইত্যাদি ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
নিউরোসার্জিক্যাল চিকিৎসা : সর্বোচ্চ ওষুধের ডোজে যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তবে এই রোগের নিউরোসার্জিক্যাল চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঐ ক্ষেত্রে ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন নামে এক ধরনের অপারেশন করা হয়। এই অপারেশনে রোগীর বুকের চামড়ার নিচে এক ধরনের ইলেট্রিক্যাল ডিভাইস লাগানো হয়। পরে সেই ডিভাইসের সঙ্গে ইলেকট্রিক্যাল তারের সংযুক্তির মাধ্যমে মাথার খুলি ছিদ্র করে ব্রেইনের ভেতরে তারের অন্য মাথা ঢোকানো হয়। লিসনেকটমি নামে অন্য আরেকটি অপারেশন করা যায়। অপারেশন ব্যয়বহুল হলেও রোগী অনেক ভালো থাকে।     
আধুনিক চিকিৎসা সুই ছাড়া ইনজেকশন:
ইনজেকশন নিতে যারা ভয় পান তাদের জন্যে সুই ব্যবহার না করেই এখন ইনজেকশন দেওয়া সম্ভব।  পোর্টাল ইনস্ট্রুমেন্টস নামে কোম্পানি একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে। প্রথমে যন্ত্রটির ভেতরে ওষুধটি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারপর শরীরে যেখানে ইনজেকশন দিতে হবে সেখানে যন্ত্রটিকে উপুর করে ধরা হয়। তখন ওই যন্ত্রটি থেকে ওষুধগুলো প্রচন্ড গতিতে বেরিয়ে আসে। ওষুধটি যে ধারায় ত্বকের ভেতরে গিয়ে শরীরে প্রবেশ করে সেটি চুলের চেয়েও সরু। বিজ্ঞানীরা বলেছেন খুব সরু ধারায় এই ওষুধ প্রচন্ড গতিতে বেরিয়ে আসে। এবং এটা হয় এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে। সুইয়ের চেয়ে এই যন্ত্রটি আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে। অনেক সময় ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে মধুর মতো চটচটে ও আঠালো ওষুধ দিতে হয়। সুই দিয়ে এ ধরনের ওষুধ দেওয়া অনেক ঝামেলার। আঙুলের সাহায্যে অনেক শক্তি দিয়ে ওই ওষুধ ইনজেক্ট করতে হয় শরীরে। কিন্তু এই যন্ত্রটিতে নানা ধরনের অপশন আছে। যেমন আপনি কী ধরনের ওষুধ দিচ্ছেন সেটা সিলেক্ট করে খুব সহজেই ইনজেকশন দিতে পারেন। রোগীর খুব কষ্ট হয় না। পারকিনসন রোগ ও রোগীর বিষয় নিয়ে হতাশাগ্রস্ত না হয়ে শুরুতেই সচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভালো থাকার জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে।

লেখক : অধ্যাপক নিউরো সার্জারি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল, শাহবাগ, ঢাকা, চেম্বার : ল্যাব এইড, ধানমন্ডি, ঢাকা। প্রয়োজনে: ০১৭১১৩৫৪১২০

প্যানেল

×