
কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শরীর থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত পানি দূর করে। কিন্তু অজান্তেই কিছু সাধারণ দৈনন্দিন অভ্যাসের কারণে আমরা নিজেদের কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করছি। সময় থাকতে সচেতন না হলে এই ক্ষতি পরবর্তীতে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এমন ১০টি সাধারণ অভ্যাসের কথা, যা কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
১. ব্যথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার
ওভার দ্য কাউন্টার ব্যথানাশক, বিশেষ করে এনএসএআইডি (নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস), শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করলেও কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই কিডনির সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি আরও বিপজ্জনক। তাই ব্যথানাশক ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং কখনোই নির্ধারিত ডোজের বেশি গ্রহণ করবেন না।
২. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
লবণসমৃদ্ধ খাবার উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম সরবরাহ করে, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে কিডনির ক্ষতি করতে পারে। খাবারে অতিরিক্ত লবণের পরিবর্তে হার্বস ও মশলার ব্যবহার অভ্যাস করুন। ধীরে ধীরে লবণ ছাড়া খাবার খাওয়া আপনার জন্য সহজ হয়ে উঠবে।
৩. প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়া
প্রক্রিয়াজাত খাবারে সোডিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তাদের জন্য খাদ্যতালিকায় ফসফরাস কমানো জরুরি। এমনকি সুস্থ মানুষদের ক্ষেত্রেও প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে অতিরিক্ত ফসফরাস গ্রহণ কিডনি ও হাড়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য ‘ড্যাশ ডায়েট’ অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৪. পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া
শরীরের সোডিয়াম ও টক্সিন পরিষ্কার করতে কিডনির পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন। যথেষ্ট পানি পান করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও কমে। সাধারণত সুস্থ ব্যক্তিদের প্রতিদিন ১.৫ থেকে ২ লিটার (৩ থেকে ৪ পিন্ট) পানি পান করা উচিত।
৫. ঘুমের অভাব
ভাল ঘুম শুধুমাত্র মস্তিষ্ক বা শরীরের জন্য নয়, কিডনির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনির কার্যকারিতা আমাদের ঘুম-জাগরণ চক্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কম ঘুমান, তাদের কিডনির কার্যক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে।
৬. অতিরিক্ত মাংস খাওয়া
প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণের ফলে শরীরে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হয়, যা কিডনির ক্ষতি করে এবং অ্যাসিডোসিস সৃষ্টি করতে পারে। শরীরের বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন দরকার হলেও খাদ্যতালিকায় ফলমূল ও শাকসবজির ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।
৭. বেশি চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া
চিনি সরাসরি স্থূলতা বাড়ায়, যা উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়,এই দুইটি কিডনি রোগের প্রধান কারণ। শুধুমাত্র মিষ্টি নয়, অনেক প্রসেসড খাবার ও পানীয়তেও চিনি থাকে। কনডিমেন্টস, ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল, হোয়াইট ব্রেড এমন অনেক খাবারে চিনি লুকিয়ে থাকে। তাই কেনাকাটার সময় লেবেল দেখে চিনি আছে কিনা তা যাচাই করুন।
৮. ধূমপান করা
ধূমপান শুধু ফুসফুস বা হৃদয়ের জন্য নয়, কিডনির জন্যও ক্ষতিকর। যারা ধূমপান করেন, তাদের মূত্রে প্রোটিনের উপস্থিতি বেশি পাওয়া যায়, যা কিডনি ক্ষতির লক্ষণ।
৯. অতিরিক্ত মদ্যপান
নিয়মিত অতিরিক্ত মদ্যপান (প্রতিদিন চার বা তার বেশি পানীয়) দীর্ঘমেয়াদে কিডনি রোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ করে। যারা ধূমপান এবং মদ্যপান দুইই করেন, তাদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি পাঁচ গুণ বেশি।
১০. দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা
অনেকক্ষণ স্থির বসে থাকা এখন কিডনি রোগের সম্ভাবনার সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ঠিক কীভাবে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা কিডনির ওপর প্রভাব ফেলে তা এখনো গবেষণাধীন, তবে এটা স্পষ্ট যে বেশি হাঁটাচলা ও শরীরচর্চা করলে রক্তচাপ ও গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা কিডনির জন্য ভালো।
কিডনি আমাদের শরীরের নীরব রক্ষাকর্তা। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে সচেতন জীবনযাপন জরুরি। এখনই আপনার প্রতিদিনের অভ্যাসগুলোর দিকে নজর দিন। কারণ, সচেতনতাই হতে পারে সুস্থ কিডনির চাবিকাঠি।
সূত্র:https://tinyurl.com/2j3avw2f
আফরোজা