ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

বই পড়া ও স্ক্রিন টাইম শিশুদের মস্তিষ্কে ভিন্ন প্রভাব ফেলে: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

বই পড়া ও স্ক্রিন টাইম শিশুদের মস্তিষ্কে ভিন্ন প্রভাব ফেলে: গবেষণা

নিউরোসায়েন্টিফিক সাময়িকী 'ডেভেলপমেন্টাল সায়েন্স'-এ প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, বই থেকে গল্প শোনার সময় এবং স্ক্রিনে গল্প দেখার সময় শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যক্রমে পার্থক্য দেখা দেয়। গবেষকরা ফাংশনাল নিঅর-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোস্কোপি (fNIRS) নামক নিউরোইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখতে পান, বই পড়ার সময় শিশুদের মস্তিষ্কের ডান গোলার্ধে, বিশেষ করে সামাজিক বোঝাপড়ার সঙ্গে জড়িত অঞ্চলে, বেশি সক্রিয়তা দেখা দেয়; অন্যদিকে স্ক্রিন টাইমে উভয় গোলার্ধে তুলনামূলকভাবে সমান মাত্রায় সক্রিয়তা দেখা যায়।

শিশুদের ভাষা বিকাশ ও মস্তিষ্কের বৃদ্ধিতে বই পড়ে শোনানো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বই পড়ার মাধ্যমে শিশুরা সমৃদ্ধ ভাষা শুনতে পায়, গল্পের গঠন শিখে, শব্দভাণ্ডার বাড়ায় এবং অভিভাবকের সঙ্গে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। বিপরীতে, অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে ভাষা বিকাশে বিলম্ব এবং স্নায়বিক সংযোগ দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

পূর্বের গবেষণাগুলো বই পড়া ও স্ক্রিন ব্যবহারের মধ্যে শিশুদের ফলাফলে বিস্তৃত পার্থক্য দেখালেও, সরাসরি মস্তিষ্কের কার্যক্রমের তুলনামূলক বিশ্লেষণ ছিল কম। এই গবেষণায় গবেষকরা সরাসরি লাইভ বই পড়া এবং স্ক্রিনভিত্তিক গল্প শোনার সময় শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম পরিমাপ করেছেন।

গবেষণায় ৩ থেকে ৬ বছর বয়সী ২৮ জন সাধারণভাবে বিকশিত শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অংশগ্রহণকারী শিশুরা মূলত ইংরেজিভাষী পরিবার থেকে এলেও কিছু ছিল বহুভাষিক। শিশুদের দুইটি গল্প শোনানো হয়: একটি লাইভ বই পাঠের মাধ্যমে এবং অন্যটি স্ক্রিনে চিত্রের সঙ্গে অডিও রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে। দুটি গল্প দৈর্ঘ্য, শব্দভাণ্ডার ও বিষয়বস্তুর দিক থেকে সমানভাবে মিলিয়ে নেওয়া হয়।

লাইভ বই পড়ার সময় একজন গবেষক শিশুর পাশে বসে বই পড়ে শোনান, আর স্ক্রিন টাইমের ক্ষেত্রে শিশুরা কম্পিউটারে চিত্রসহ রেকর্ডকৃত গল্প দেখে ও শোনে। এই সময় পুরো মস্তিষ্কের কার্যক্রম fNIRS পদ্ধতিতে পরিমাপ করা হয়, যা রক্তে অক্সিজেনের পরিবর্তনের মাধ্যমে স্নায়বিক সক্রিয়তা নির্ণয় করে।

গবেষকরা ভাষা, গল্প অনুধাবন এবং সামাজিক সচেতনতার সঙ্গে যুক্ত নির্দিষ্ট মস্তিষ্ক অঞ্চলের উপর নজর দেন, যেমন: ইনফেরিয়র ও মিডল ফ্রন্টাল গাইরি, সুপেরিয়র ও মিডল টেম্পোরাল গাইরি এবং টেম্পোরাল-প্যারিয়েটাল জাংশন। 

ফলাফলে দেখা যায়, লাইভ বই পড়ার সময় ডান টেম্পোরাল-প্যারিয়েটাল জাংশন অঞ্চলে বেশি সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়, যা সামাজিক প্রক্রিয়া যেমন যৌথ মনোযোগ ও অন্যের চিন্তাভাবনা বোঝার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই ধরনের সক্রিয়তা স্ক্রিন টাইমের সময় দেখা যায়নি। এছাড়া বই পড়ার সময় মস্তিষ্কের ডান গোলার্ধে তুলনামূলকভাবে বেশি সক্রিয়তা দেখা যায়, যেখানে স্ক্রিন টাইমে সক্রিয়তা ছিল দুই গোলার্ধে সমানভাবে বিস্তৃত।

এই গবেষণা ইঙ্গিত করে যে, বই পড়ে শোনানো শিশুদের সামাজিকভাবে মনোনিবেশিত মানসিক প্রক্রিয়ায় আরও বেশি সম্পৃক্ত করে, যেখানে স্ক্রিন টাইম তুলনামূলকভাবে কম সামাজিক সম্পৃক্ততার সুযোগ দেয়।

তবে গবেষকরা সতর্ক করেছেন, ছোট নমুনার আকার এবং অংশগ্রহণকারীদের উচ্চ শিক্ষিত ও উচ্চ আয়ের পরিবারের অন্তর্গত হওয়া গবেষণার সীমাবদ্ধতা তৈরি করতে পারে। তারা ভবিষ্যতে আরও প্রাকৃতিক পরিবেশে অভিভাবক-শিশু বই পড়ার সময় মস্তিষ্কের কার্যক্রম বিশ্লেষণের আহ্বান জানান।

যদিও এই গবেষণায় ভাষা শেখার সরাসরি ফলাফল পরিমাপ করা হয়নি, তবুও এটি ইঙ্গিত দেয় যে, বই পড়ে শোনানোর সময়কার সামাজিক মিথস্ক্রিয়া শিশুর ভাষাগত ও সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

গবেষণার শিরোনাম ছিল: **"Do Children’s Brains Function Differently During Book Reading and Screen Time? A fNIRS Study"**, এবং এটি মেরেডিথ পেকুকোনিস, মেরিয়েম ইউচেল, হেনরি লি, কোরি নক্স, ডেভিড এ বোয়াস এবং হেলেন টেগার-ফ্লুসবার্গ যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন।

মুমু

×