ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

নোংরা দাঁতের ব্যাকটেরিয়া পৌঁছায় ব্রেইনে, ধ্বংস করে স্নায়ুকোষ !

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

নোংরা দাঁতের ব্যাকটেরিয়া পৌঁছায় ব্রেইনে, ধ্বংস করে স্নায়ুকোষ !

ছবি: সংগৃহীত

​নোংরা দাঁতের ব্যাকটেরিয়া শুধু মুখগহ্বরেই সীমাবদ্ধ থাকে না—এগুলি রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে স্নায়ুকোষ ধ্বংস করতে পারে, এমনকি ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমার রোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি এই ভয়াবহ সংযোগের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছে, যা আমাদের দৈনন্দিন দাঁতের যত্নের গুরুত্বকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।​

🧠 দাঁতের ব্যাকটেরিয়া কিভাবে মস্তিষ্কে পৌঁছায়?

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, মুখগহ্বরের ব্যাকটেরিয়া রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে ব্রেইন অ্যাবসেস (মস্তিষ্কে পুঁজ জমা) সৃষ্টি করতে পারে। Rigshospitalet-এ ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়াগুলি মুখ থেকে মস্তিষ্কে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে ।​ 

বিশেষজ্ঞ ড. মেরেট মার্কভার্ট বলেন, “দাঁতের সমস্যা শুধু ক্যাভিটি নয়; অনেক সময় কোনো উপসর্গ ছাড়াই মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হতে পারে, যা মস্তিষ্কে পৌঁছে প্রাণঘাতী হতে পারে।”​

🧬 গাম ডিজিজ ও নিউরোইনফ্ল্যামেশন:

স্নায়ুকোষের শত্রু গাম ডিজিজ বা পেরিওডন্টাল রোগের অন্যতম কারণ ব্যাকটেরিয়া Porphyromonas gingivalis, যা মস্তিষ্কে পৌঁছে স্নায়ুকোষে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এটি নিউরোইনফ্ল্যামেশন বাড়িয়ে স্নায়ুকোষের মৃত্যু ঘটাতে পারে, যা ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমারের ঝুঁকি বাড়ায় ।​

এছাড়া, মুখের ব্যাকটেরিয়া রক্ত-মস্তিষ্ক বাধা (blood-brain barrier) দুর্বল করে, ফলে অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থও মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে।​

🧪 গবেষণার ফলাফল:

স্মৃতিভ্রংশের সঙ্গে মুখের ব্যাকটেরিয়ার সম্পর্ক ইউনিভার্সিটি অফ এক্সেটারের গবেষণায় দেখা গেছে, মুখের কিছু ব্যাকটেরিয়া যেমন Neisseria ও Haemophilus স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক, অন্যদিকে Porphyromonas ও Prevotella ব্যাকটেরিয়া স্মৃতিভ্রংশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। গবেষক ড. জোয়ানা ল’হিউরু বলেন, “মুখের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে নতুন পথ খুলে দিতে পারে” ।​ 

🦷 দাঁতের যত্নে মস্তিষ্কের সুরক্ষা

দাঁতের যত্ন শুধু মুখের স্বাস্থ্য নয়, মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্যও অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞরা নিম্নলিখিত পরামর্শ দেন:​

প্রতিদিন দুইবার দুই মিনিট করে দাঁত ব্রাশ করুন।

প্রতিদিন ফ্লস ব্যবহার করুন।

নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ ও স্কেলিং করান।

সুস্থ খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন এবং চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান।

মুখের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য রক্ষায় প্রোবায়োটিক খাবার (যেমন দই, কিমচি) গ্রহণ করুন।​

ড. কেভিন মিলার বলেন, “গাম ডিজিজের ফলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ছয় গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তাই মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা মানে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা” ।​

🔍 উপসংহার: দাঁতের যত্নে মস্তিষ্কের সুস্থতা

মুখের ব্যাকটেরিয়া শুধু দাঁতের ক্ষতি করে না; এটি মস্তিষ্কে পৌঁছে স্নায়ুকোষ ধ্বংস করতে পারে, স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই দাঁতের যত্ন নেওয়া শুধু একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়, এটি মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।​

সতর্কতা:

মুখের স্বাস্থ্য অবহেলা করলে তা মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক হতে পারে। নিয়মিত দাঁতের যত্ন ও ডেন্টাল চেকআপের মাধ্যমে আপনি আপনার মস্তিষ্ককেও সুরক্ষিত রাখতে পারেন।​

আসিফ

×