ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

চিনির বিকল্প হিসেবে যা খান, তা কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

চিনির বিকল্প হিসেবে যা খান, তা কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

চিনি এখন অনেকের কাছেই এক ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফলে অনেকেই স্বাভাবিক চিনির বদলে বেছে নিচ্ছেন বিকল্প মিষ্টি উপাদান।যেমন স্টেভিয়া, মনক ফ্রুট কিংবা ইরিথ্রিটল। এগুলোর ব্যবহার ও উপকারিতা নিয়ে চিকিৎসকদের মতামত মিললেও, অতিরিক্ত নির্ভরতা কি আদৌ নিরাপদ?

মুম্বাইয়ের বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী দীপিকা সাসমল বলেন, “ডেজার্ট খাওয়ার পর আর অপরাধবোধ হয় না। মনক ফ্রুট ব্যবহার করার পর শরীর হালকা লাগে, ত্বকেও পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, এতে কোনো ক্যালোরি নেই।”

ভোপালের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী অক্ষয় সরস্বত বলেন, “প্রথমে স্টেভিয়া ব্যবহার করেছিলাম, কিন্তু তাতে তেতো আফটারটেস্ট ছিল। এখন মনক ফ্রুট ও ইরিথ্রিটল মিশ্রিত একটি বিকল্প ব্যবহার করি।চিনির মতোই লাগে, কোনো খটকা নেই।”

অনেকে মনে করেন, এসব বিকল্প উপাদান তাদের শরীরের জন্য অপেক্ষাকৃত ভালো। তবে আদৌ কতটা উপকার মেলে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।


ওজন কমাতে সহায়ক?
ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান গৌরী আনন্দ জানান, “পরিমিত ব্যবহারে চিনির বিকল্পগুলো ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে, তবে তার কার্যকারিতা নির্ভর করে আপনি কোন বিকল্পটি কীভাবে ব্যবহার করছেন তার ওপর।”

মিষ্টির লোভ বাড়তে পারে
এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. উদয় ফাড়কে বলেন, “চিনির বিকল্প যদি বেশি খাওয়া হয়, তাহলে সেটা উল্টো করে মিষ্টি খাবারের প্রতি আরও লোভ বাড়িয়ে দিতে পারে।”

হজমে সমস্যা হতে পারে
ওজন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ডা. প্রত্যক্ষ ভারদ্বাজ বলেন, “চিনি-মুক্ত প্রোডাক্ট সাধারণত নিরাপদ হলেও, অতিরিক্ত খেলে পেটের গণ্ডগোল বা ল্যাক্সেটিভ ইফেক্ট দেখা দিতে পারে। অনেক পণ্যের মোড়কে এ ধরনের সতর্কবার্তা থাকে।”

বিভ্রান্তি দূর করলেন চিকিৎসকরা

অনেকেই মনে করেন, স্টেভিয়া বা মনক ফ্রুটের মতো বিকল্প পুরোপুরি নিরাপদ। তবে ডা. রাজীব কোভিল বলেন, “এই উপাদানগুলো সাধারণত নিরাপদ হলেও, অতিরিক্ত খেলে পেটের অস্বস্তি বা হজমের সমস্যা হতে পারে যদিও এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।”

ডায়েটিশিয়ান গৌরী আনন্দ আরও বলেন, “প্রাকৃতিক হলেও গুড় ও মধুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে। একইভাবে আগাভ সিরাপ, নারকেল চিনি বা মেপল সিরাপও রক্তে শর্করা বাড়ায় এবং এতে থাকা ফ্রুকটোজ দীর্ঘমেয়াদে বিপাকজনিত সমস্যা তৈরি করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “যেমন অ্যাসপারটেম বা স্টেভিয়ার মতো শূন্য ক্যালোরিযুক্ত বিকল্পগুলোর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। তাই সংযমই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

পণ্য প্রস্তুতকারকদের দৃষ্টিভঙ্গি

গরমেট ফুড কিচেনের প্রতিষ্ঠাতা ও শেফ নিটা পুরোহিত বলেন, “অনেকে এখন প্রাকৃতিক বিকল্পের দিকে ঝুঁকছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে খেজুর, কিসমিস, কলা ও আপেলের মতো ফল ব্যবহার করি, যাতে বাড়তি পুষ্টিগুণও থাকে।”

তবে প্রতিটি রেসিপিতে একইভাবে বিকল্প মিষ্টি ব্যবহার করা যায় না। ‘গ্লুটেন ফ্রি কিচেন’ প্রতিষ্ঠাতা শেফ শিবানী শর্মা জানান, “আমি ডেট পেস্ট বা নারকেল চিনি ব্যবহার করি, যেটি আর্দ্রতা ও মিষ্টি দুইই বজায় রাখে। হালকা প্যাস্ট্রিতে মেপল সিরাপ দিলে টেক্সচারে পরিবর্তন আসে, তাই রেসিপির গঠন অনুযায়ী পরিবর্তন করতে হয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমার ক্লায়েন্টরা বলেন, রিফাইন্ড সুগার খাওয়ার পর যেমন হুট করে এনার্জি বাড়ে আবার পড়ে যায় সেই সমস্যা তারা এখন আর অনুভব করেন না।”

 


সূত্র:https://tinyurl.com/5ykv3pvy

আফরোজা

×