
ছবিঃ সংগৃহীত
মানুষের জীবন একটি অমূল্য উপহার, তবে কখনও কখনও শরীরে এমন কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে যা হঠাৎ মৃত্যু ঘটায়। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দ্রুত সাড়া দেওয়া প্রয়োজন, তবে আমাদের অনেকেই এই ধরনের পরিস্থিতি বুঝতে বা প্রতিরোধ করতে সক্ষম নই। এই রিপোর্টে, আমরা কিছু সাধারণ কারণ আলোচনা করবো, যার ফলে মানুষের হঠাৎ মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।
১. হার্ট অ্যাটাক (হৃদরোগ)
হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, যা আমাদের সাধারণভাবে হৃদরোগ নামে পরিচিত, হঠাৎ মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। এটি ঘটে যখন হৃদপিণ্ডের কোনো অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে হৃদপিণ্ডের কোষ মারা যেতে পারে এবং জীবন রক্ষাকারী অঙ্গগুলো যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো যেমন, বুকের মাঝখানে তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বা হাত বা কাঁধে ব্যথা, এগুলির প্রতি সচেতনতা থাকা জরুরি।
২. স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তপাত বা রক্ত জমাট)
স্ট্রোক হচ্ছে এক ধরনের মস্তিষ্কের আঘাত যা মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহে বাধা দেয়। রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কিছু অংশ অক্সিজেন এবং পুষ্টি পায় না এবং সেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্ট্রোকের লক্ষণগুলির মধ্যে মুখের একপাশ অবশ হয়ে যাওয়া, হাত-পা অবশ হওয়া, অথবা ভাষায় সমস্যা দেখা দেওয়া অন্যতম। স্ট্রোকের জন্য চিকিৎসা প্রাপ্তি অবিলম্বে প্রয়োজন, কারণ দেরি করলে জীবন হারানোর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. দূরবর্তী সঞ্চালন বা পালমোনারি এমবোলিজম (ফুসফুসে রক্ত জমাট)
ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধা বা পালমোনারি এমবোলিজম (PE) খুব দ্রুত ও মারাত্মক বিপদ হতে পারে। এটি ঘটে যখন রক্তের জমাট (থ্রম্ব) ফুসফুসের ধমনিতে প্রবাহিত হয় এবং রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, বুকের ব্যথা, এবং হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে। বিশেষত, দীর্ঘ সময় বসে থাকলে বা হাঁটাচলা না করলে এই অবস্থার ঝুঁকি বাড়ে।
৪. অ্যাঞ্জিনা পেকটোরিস (হৃদযন্ত্রের রক্তনালীর সংকোচন)
অ্যাঞ্জিনা পেকটোরিস তখন ঘটে যখন হৃদপিণ্ডের রক্তনালীগুলো সংকুচিত বা বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে হৃদপিণ্ডে রক্তের অভাব ঘটে। এটি একধরনের যন্ত্রণা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করে এবং যদি এটি অধিক তীব্র হয় বা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে তবে এটি হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। অ্যাঞ্জিনা পেকটোরিসের লক্ষণ যেমন বুকের মাঝখানে চাপ অনুভব করা, শ্বাসকষ্ট, দ্রুত ক্লান্তি অনুভব করা — এগুলি উপেক্ষা করা উচিত নয়।
৬. আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (হৃদযন্ত্রের অস্বাভাবিক ক্রিয়া)
আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট তখন ঘটে যখন হৃদপিণ্ড হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় বা তার সঠিকভাবে ধাক্কা দেয় না। এটি সাধারণত অজ্ঞানতা, শ্বাসকষ্ট এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়। এটি অনেক সময় হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার ফলস্বরূপ ঘটে।
হঠাৎ মৃত্যু বিভিন্ন কারণেই হতে পারে, এবং একে প্রতিরোধ করার জন্য সচেতনতা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা জানাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য, শ্বাসযন্ত্রের কার্যক্ষমতা এবং শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর সঠিক যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে হঠাৎ মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সূত্রঃ https://www.facebook.com/share/v/1Yp9VZNAXj/
আরশি