
ছবি: প্রতীকী
মানবদেহের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যকৃত বা লিভার। ওজন প্রায় তিন পাউন্ড। অথচ এই ছোটখাটো অঙ্গটিই দেহে পাঁচ শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে। প্রোটিন হজম থেকে শুরু করে রক্ত পরিশোধন, খনিজ সংরক্ষণ, পিত্ত উৎপাদন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো লিভার করে থাকে।
এই অঙ্গটিকে সুস্থ রাখা মানেই শরীরকে সুস্থ রাখা। আর সে কারণেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা প্রতিদিনের রুটিনে যকৃতের যত্ন নেওয়াকে গুরুত্ব দেন।
পেটরোগ ও অন্ত্রবিশেষজ্ঞ (গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট) ডা. জোসেফ সালহাব, যিনি অনলাইনে ডা. জিআই জো নামে পরিচিত, তার দৈনন্দিন সকালের রুটিনে তিনি লিভার সুস্থ রাখার জন্য যা করেন তা অনলাইনে প্রকাশ করেছেন।
সকালের শুরু
ডা. জো’র দিন শুরু হয় এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সঙ্গে মেশানো এক চামচ তাজা লেবুর রস দিয়ে। তার ভাষায়, “আমি দিনটা শুরু করি এমনভাবে, যাতে লিভার পুষ্টি পায় ও শরীর হয় সতেজ। উষ্ণ পানি আর ভিটামিন সি অন্ত্রের গতি বাড়ায়, আর রাতভর না খেয়ে থাকার পর শরীরকে হাইড্রেট রাখে।”
যদিও লিভারের জন্য আলাদা কোনো ‘ডিটক্স ড্রিংক’-এর প্রয়োজন পড়ে না, তবে লেবু প্রাকৃতিকভাবেই হালকা ডিটক্সিফায়ার বা বিষক্রিয়া রোধক হিসেবে কাজ করে। এটি পিত্ত উৎপাদন বাড়ায়, ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি গলতে শুরু করে ও বিষাক্ত পদার্থ বের করা সহজ হয়।
ব্যায়াম
সকাল ৬টা বাজতেই ডা. জো রওনা হন জিমের দিকে। নিয়মিত ব্যায়াম তাঁর কাছে শুধু শরীরচর্চা নয়, বরং লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষার অন্যতম উপায়। তিনি বলেন, “শরীর সচল রাখুন, যাতে লিভার সক্রিয় থাকে। এতে করে চর্বিযুক্ত লিভারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।”
বিজ্ঞানও বলে ব্যায়াম লিভারের চর্বি কমায়, ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং সামগ্রিক বিপাকক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে করে নন-অ্যালকোহলিক চর্বিযুক্ত লিভার ডিজিজ (NAFLD) প্রতিরোধে সহায়তা পাওয়া যায়।
জিমের পর কফি
প্রায় ৪৫ মিনিট ব্যায়ামের পর ডা. জো এক কাপ কফি খান। তবে তাতে চিনির পরিবর্তে খানিকটা দারচিনি থাকে।
তিনি বলেন, “কফি কিংবা জেসমিনযুক্ত গ্রিন টি লিভার ও মস্তিষ্ককে সতেজ করে। এতে থাকা ক্যাফেইন ও ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড লিভারের কোষকে সুরক্ষা দেয়।”
গবেষণা অনুযায়ী, কফিতে থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে, প্রদাহ কমায়, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্যকর খাবার
সকাল ৭:৩০ নাগাদ তার নাস্তার টেবিলে থাকে সুপরিকল্পিত কিছু উপাদান যেমন, খেজুর, আখরোট আর ডার্ক চকলেট।
আখরোটে থাকা ওমেগা-৩ ও ভিটামিন ‘ই’ চর্বিযুক্ত লিভারের ঝুঁকি কমায়। খেজুরে থাকা ইলেকট্রোলাইট ও ফাইবার ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ করে, ফলে দীর্ঘস্থায়ী শক্তি পাওয়া যায়।
এরপর আসে মূল নাস্তা। দইয়ের সঙ্গে এক মুঠো বেরি, চিয়া সিড আর এক ফোঁটা মধু। দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক ও ক্যালসিয়াম হজম ও লিভারের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে। বেরিগুলোতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা লিভারের কোষ রক্ষা করে। চিয়া সিড থেকে মেলে ফাইবার ও ওমেগা-৩, যা প্রদাহ কমাতে এবং হজম বাড়াতে কাজ করে। আর মধু তো প্রাকৃতিক মিষ্টির উৎসই, সঙ্গে আছে লিভার-সুরক্ষাকারী ফ্ল্যাভোনয়েড।
ডা. জো বলেন, “এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই আমাকে সারাদিনের জন্য শক্তি দেয়।”
যকৃত শরীরের অন্যতম নিয়ামক। এটি শুধু হজম নয়, বরং দেহে বিষক্রিয়া রোধ করে, রোগ প্রতিরোধ বাড়ায় এবং সামগ্রিক বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখে।
তাই নিয়মিত পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, মদ্যপান এড়িয়ে চলা এবং পর্যাপ্ত ঘুম, এসবই লিভারকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে পারে। আর সকালের নাস্তায় যদি থাকে ডা. জো-র মতো লিভারের উপযোগী খাদ্য উপাদান, তবে সুস্থতার পথে আপনি এক ধাপ এগিয়েই থাকবেন।
তথ্যসূত্র
টাইমস অব ইন্ডিয়া
সুরাইয়া